দেশের শতকরা ১২ ভাগ নারী থাইরয়েড ঝুঁকিতে

দেশের শতকরা ১২ ভাগ নারী থাইরয়েড ঝুঁকিতে

পোশাক শিল্পে কর্মরত বাংলাদেশের নারীরা। ফাইল ছবি

মানব শরীরের অন্যতম রোগ থাইরয়েড। নারীরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের ১২ শতাংশ নারীদের, জীবনের যেকোনো সময়ে থাইরয়েড সমস্যা দেখা দিতে পারে। থাইরয়েড রোগের নানা দিক নিয়ে ডক্টর টিভির সঙ্গে কথা বলেছেন পপুলার মেডিকেল কলেজের গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের অধ্যাপক ডা. কোহিনুর বেগম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. তানিয়া রহমান মিতুল।

ডক্টর টিভি: থাইরয়েড সমস্যা কী?

 অধ্যাপক ডা. কোহিনুর বেগম: থাইরয়েড হচ্ছে একটি গ্ল্যানড। গ্ল্যানড থেকে নিঃসৃত হরমোন। থাইরয়েড থেকে  থাইরক্সিন এবং ট্রায়ো থাইরোনিন হরমোন নিঃসৃত হয। এগুলো শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে জড়িত।

ডক্টর টিভি: থাইরয়েডের ধরণ কিরূপ? এর প্রকোপ কতটুকু?

অধ্যাপক ডা. কোহিনুর বেগম: থাইয়েরড থেকে নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ কখনো কমে যেতে পারে, আবার কখনো বেড়ে যেতে পারে। এই হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায় তখন তাকে বলে হাইপার থাইরয়েডিজম। আর হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে তাকে বলে হাইপোথাইরয়েডিজম। থাইরয়েড শরীরে মেটাবলিক বাড়ায়, এটা বিভিন্ন মেটাবলিজমের কাজ করে যেমন- কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট প্রোটিন। বাচ্চাদের বেলায় এই থাইরয়েড বাচ্চার বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্থ করে। সেন্ট্রাল নার্ভ সিস্টেমের ওপর থাইরয়েডের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। হরমোন থাইরয়েড কমে গেলে মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায়। ঘুমের ওপর থাইরয়েডের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে বাচ্চাদের মেধার বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়।

ডক্টর টিভি: থাইরয়েডের কারণে গর্ভাবস্থায় শিশুদের কি কি সমস্যা হতে পারে?

অধ্যাপক ডা. কোহিনুর বেগম: পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমাদের দেশের ১২ভাগ নারীদের জীবনের যেকোনো সময়ে থাইরয়েড সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোন গর্ভবতী মা যদি হাইপো থাইরয়েড রোগী হয় এবং তাকে সঠিক চিকিৎসা না দেয়া হয়, সে ক্ষেত্রে বাচ্চার মধ্যে যে হাইপো থাইরয়েড ডেভলপমেন্ট হয়, তাকে কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম বলে। এক্ষেত্রে নবজাতকের ওপর যে প্রভাব পড়ে। সময়ে বাচ্চার খাবারে সমস্যা প্রবলেম হয়, সে মায়ের দুধ পান করতে চায় না। বাচ্চার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। বাচ্চা কাঁদে না, বাচ্চা শব্দ করে শ্বাস নেয়, বাচ্চা অনেক বেশি ঘুমায়। বাচ্চার জিহ্বা বড় হয়, এক্ষেত্রে জিহবার চামড়ার রং কিছুটা হলদে হয় এবং চোখের রং সাদা হয়।

ডক্টর টিভি: থাইরয়েডের কারণে বাচ্চার বেড়ে ওঠার কি কি সমস্যা হতে পারে?

অধ্যাপক ডা. কোহিনুর বেগম: থাইরয়েডের কারণে বাচ্চা যখন আরেকটু বড় হয় তখন শরীরে প্রভাব বেশি পড়ে। বাচ্চার সঠিক পদ্ধতিতে বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্থ হয়। এ সময় বাচ্চার বয়স অনুযায়ী যে পরিমাণ উচ্চতা থাকার কথা সেটা থাকে না। দাঁত দেরি করে উঠে। বাচ্চারা দুর্বল থাকে, তাদের শরীর শুকনো থাকে। টিনেজ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হাইপার থাইরয়েডিজম এবং হাইপোথাইরয়েডিজম দুটিই থাকতে পারে। টিনেজদের ক্ষেত্রেও তাদের বুদ্ধি বিকাশ দেরিতে হয়। থাইরয়েডের সমস্য সাধারণত মেয়েদের বেশি হয়ে থাকে। ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ৫ থেকে ৮ গুণ বেশি দুর্বল থাকে। মেয়েদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে। মেয়েদের ব্রেস্ট ডেভলপমেন্ট ধীরে হয়, শরীর শুকনো থাকে, কণ্ঠের সমস্যা হয়।

ডক্টর টিভি: থাইরয়েড হরমোনের কারণে রিপ্রোডাক্টিভ বয়সে নারীদের গর্ভবতী হতে সমস্যা হতে পারে কি?

অধ্যাপক ডা. কোহিনুর বেগম: থাইরয়েড হরমোনের প্রভাবে রিপ্রোডাক্টিভ বয়সের নারীদের গাইনোকোলজিক্যাল কিছু সমস্যা হতে পারে। তাদের প্রেগনেন্সিতেও কিছু সমস্যা হতে পারে। তাদের পিরিয়ডের সমস্যা হতে পারে। যেসব মেয়েদের হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা থাকে তাদের পিরিয়ড এর পরিমাণ বেশি হয়। যাদের পিরিয়ড প্রতিমাসে নিয়মিত হয়, কিন্তু পিরিয়ড এর পরিমাণ খুব বেশি হয়। আর যেসব মেয়েদের হাইপারথাইরয়েডিজমের সমস্যা থাকে তাদের পিরিয়ড অনিয়মিত, দেরিতে হয় এবং পিরিয়ড এর পরিমাণ কম হয়। যাদের সাব ক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়েডিজম থাকবে তাদের গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে। তাদের ওভুলেশন হ্যাম্পার হয়। এ সময় মায়েদের মানসিক দুর্বলতা এসে যায়। গর্ভাবস্থায় মায়েদের হাইপারথাইরয়েডিজমের ফলে মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, ডেলিভারি আগে হতে পারে, তাদের বাচ্চার বেড়ে ওঠা ঠিকমত হতে পারে না। এমনকি বাচ্চা পেটের ভেতর মরে যেতে পারে। এই সময়ে মায়েদের হার্ট ফেইলিওর হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

ডক্টর টিভি: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

অধ্যাপক ডা. কোহিনুর বেগম: ডক্টর টিভিকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।