পরিমিত ঘুমে চোখের অনেক রোগ ভালো হয়

পরিমিত ঘুমে চোখের অনেক রোগ ভালো হয়

চোখের রোগ
কোনো কারণে চোখ শুকিয়ে গেলে চোখে পানি বেশি আসে - প্রতীকী ছবি

চোখ দিয়ে পানি পড়া অথবা চোখের পাপড়ি উঠানামা করে অনেকের। চোখের অ্যালার্জি ও মাথাব্যাথাসহ নানা রোগের কারণে এসব সমস্যা দেখা দেয়। তবে খাদ্যাভাস পরিবর্তন, প্রয়োজনীয় ঘুম ও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চললে এসব সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। ডক্টর টিভির সঙ্গে চোখের নানা সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে কথা বলেছেন ইস্পাহানী ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালের গ্লকোমা বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও সহকারী অধ্যাপক ডা. তানিয়া রাহমান ছড়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফখরুল ইসলাম

ডক্টর টিভি: অনেক সময় আমাদের চোখ দিয়ে পানি পড়ে এটা কেন হয়?

ডা. তানিয়া রহমান ছড়া: চোখ দিয়ে পানি পড়া আমাদের দেশে একটি সাধারণ সমস্যা। এটা  বিভিন্ন কারণে হতে পারে। একটি হলো আমাদের চোখে স্বাভাবিকভাবেই প্রাকৃতিকভাবে পানি আসে। কিন্তু কোনো কারণে চোখ শুকিয়ে গেলে চোখে পানি বেশি আসে। আরেকটি কারণ হল, অ্যালার্জির সমস্যার কারণে চোখে পানি চলে আসে। আলোর দিকে তাকাতে পারে না। এছাড়া আমাদের চোখ থেকে নাকের ভিতরের দিকে একটা পাইপ থাকে, এটাকে আমরা নেত্রনালী বলি। অনেক সময় এটি ব্লক হয়ে যায়, এখানে চোখ সেটা ধারণ করতে পারে না। আর তখন চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসে। অনেক সময় চোখের পাতার নিচে ময়লা আটকে থাকে, সেটা স্বাভাবিক ভাবে দেখা যায় না। তখন সেটা আমরা চোখের পাতা উল্টিয়ে মেশিন বসিয়ে দেখি যে, একটা ছোট ময়লা আটকে আছে। এতে ইরিটেশনের ফলে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসে। তাই চোখ দিয়ে পানি পড়লে ডাক্তারের কাছে গিয়ে কারণ নির্ণয় করতে হবে এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।

ডক্টর টিভি: সাধারণত চোখ দিয়ে পানি পড়া রোগীরা  কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন?

ডা. তানিয়া রহমান ছড়া: এসব রোগীরা আসলে আমাদের বহির্বিভাগ সেবা চালু আছে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠিয়ে থাকেন। যেমন, কারো চোখ শুকিয়ে গেলে কর্নিয়া ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হয়। অথবা কারো চোখের নেত্রনালী সমস্যার কারণে চোখে পানি আসলে অকমা প্লাস্টি বা ডিসিআর ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হয়।

ডক্টর টিভি: যাদের অ্যালার্জিক সমস্যা যাদের আছে তারা এই মুহূর্তে কি চিকিৎসা নেবেন।

ডা. তানিয়া রহমান ছড়া: বিভিন্ন কারণে অ্যালার্জি সমস্যা হয়ে থাকে। এজন্য রোগীকে অবশ্যই এলার্জির কারণ নির্ণয় করতে হবে। অনেকের খাবার থেকে এলার্জি হয়। আবার কারো ধুলাবালি থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে। অ্যালার্জির সমস্যা বেশি হলে আপনাকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং সে অনুযায়ী ড্রপ ও যাবতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, এমন কিছু ওষুধ আছে যা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যেগুলো স্টেরয়েড জাতীয় সেটা দিলে আপনার রোগটা ভালো হবে খুব তাড়াতাড়ি, কিন্তু এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। যেমন এতে চোখে গ্লকোমা রোগ হবে।

ডক্টর টিভি: যারা নিয়মিত চশমা ব্যবহার করেন, তাদের চোখের পাওয়ার চেক করার জন্য কতদিন পরপর চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?

ডা. তানিয়া রহমান ছড়া: সাধারণত প্রতিদিন আমরা যত রোগী দেখি, তার তিনভাগের একভাগই হচ্ছে চোখের পাওয়ারের চশমাজনিত রোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। সেটা হতে পারে মাইনাস পাওয়ার অথবা প্লাস পাওয়ার। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ছয় বছর বা আট বছর থেকে যখন তাদের চশমা দেয়া শুরু করি, তখন তাদের ২০ বছর বয়স পর্যন্ত ছয় মাস পরপর চোখের পাওয়ার চেক করানোর জন্য বলি। ২০ বছরের পর থেকে প্রতি বছরে অন্তত একবার চোখের পাওয়ার চেক করানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি।

ডক্টর টিভি: মাথাব্যথার সময় চোখের পাপড়ি উঠানামা বা লাফালাফি করে। সেক্ষেত্রে করণীয় কি?

ডা. তানিয়া রহমান ছড়া: এটা একটি স্বাভাবিক সমস্যা। এক্ষেত্রে ঘুমটা নিয়মিত হতে হবে। ডায়েট মেনে চলতে হবে। চা কফি খাওয়ার অভ্যাস যাদের খুব বেশি তা কিছুটা কমাতে হবে। কারণ চা -কফি খাওয়ার পরিমাণ বেশি হলে এই সমস্যাটা দেখা দেয়। পানি বেশি পরিমাণে খেতে হবে। টেনশন কম করবেন। এরপরেও যদি সমস্যা থাকে, তখন আমরা রোগীকে এনজিওলাইটিক কিছু ওষুধ এবং কিছু চোখের ড্রপ দিয়ে থাকি। কিছু দিনের জন্য আমরা চোখের জন্য আর্টিফিশিয়াল কেয়ার দিয়ে থাকি। এগুলো নিয়মমাফিক মেনে চললে সমস্যাটা কমে যাবে।

রিলেটেড সংবাদ