কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট পরবর্তী সমস্যা ও করণীয়

অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম

প্রখ্যাত কিডনি বিশেষজ্ঞ, সাবেক প্রোভিসি (প্রশাসন), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট পরবর্তী সমস্যা ও করণীয়

ফাইল ছবি
সংগৃহীত - ইন্টারনেট

আমাদের শরীরে একটি প্রতিরক্ষাতন্ত্র (রোগ প্রতিরোগ ব্যবস্থা) বিদ্যমান, যার কাজ বাইরের রোগজীবাণু থেকে শরীরকে রক্ষা করা। শরীরের ভেতরের নিজস্ব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছাড়া বাইরের কোনো জীবাণু এমনকি নতুন সংযোজিত অঙ্গটিও তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

প্রতিরক্ষাতন্ত্র শরীরবহির্ভূত কোনটি উপকারী বা অপকারী তা আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে পারে না। সেজন্য যে কোনো জিনিসের বিরুদ্ধেই সে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাই জীবন রক্ষাকারী নতুন স্থাপিত অঙ্গটির ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

অর্গান রিজেকশন

আপনার প্রতিরক্ষাতন্ত্র শরীরে প্রতিস্থাপিত নতুন অঙ্গটিকে আক্রমণ করাকেই বলা হয় অর্গান রিজেকশন।

রিজেকশন কখন হতে পারে

অঙ্গ সংস্থাপনের প্রথম ৬ মাসের মধ্যে সাধারণত রিজেকশন হতে পারে। যদিও সময়ের সাথে রিজেকশনের প্রবণতা কমে আসে। তবে ট্রান্সপ্লান্ট পরবর্তী যে কোনো সময়েই রিজেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

রিজেকশন হলে বোঝার উপায়

রিজেশনের লক্ষণ হলো– ফ্লু জাতীয় উপসর্গ, ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি তাপমাত্রা, পেটব্যথা অথবা অপারেশনের স্থান ফুলে ওঠা, প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া অথবা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, সহসা ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি। উপরোক্ত লক্ষণগুলোর কোনোটি দেখা দিলে আপনার চিকিৎসককে জানাতে হবে।

প্রতিকার

রিজেকশন হলে আপনার শরীরে স্থাপিত নতুন কিডনিটির স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটে। নতুন এই অঙ্গকে রক্ষা করার জন্য কিছু ওষুধ খেতে হয়, যাদের কাজ শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দমিয়ে রাখা। এগুলোকেই বলা হয় ‘ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট’ বা ‘অ্যান্টি-রিজেকশন’ ওষুধ। এই ব্যবহারের ফলে নতুন অঙ্গের প্রতি শরীরের প্রতিরোধ প্রবণতা কমে আসে।

ট্রান্সপ্লান্ট রোগীর কিছু ওষুধ

এক্ষেত্রে চিকিৎসাকেন্দ্র একের অধিক ওষুধের সমন্বয়ে চিকিৎসা করে থাকেন। যেমন, সেলসেপ্ট, প্রেডনিসন, নিওরাল, ইমিউরান, জেনাপেক্স, সাইমুল্যাক্ট ইত্যাদি। ইদানিং বেশকিছু নতুন ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট যেমন, প্রোগ্রাফ, ব্যাপামিউন ইত্যাদি ওষুধ চিকিৎসকরা ব্যবহার করেছেন।

ইনফেকশন বা সংক্রমণ

অ্যান্টি-রিজিকশন বা ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ওষুধ আপনার শরীরের সহজাত প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। তাই ট্রান্সপ্লান্ট হওয়ার পর আপনার সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যে সমস্ত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, সেগুলো হলো, ভাইরাস সাই-টো-মেগালো ভাইরাস (সিএমভি) সিএমভি ইনফেকশন (সংক্রমণ) ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। ট্রান্সপ্লান্টের পরে প্রথম তিন মাসেই সিএমডি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। লক্ষণগুলো হচ্ছে, দুর্বলতা, জ্বর, রাতে ঘাম হওয়া, গিরায় ব্যথা, চোখে দেখতে অসুবিধা, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। সাইমিডিন, ভ্যালসাইট নামক ওষুধ সিএমভি ইনফেকশন প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

হারপিস সিমপ্লেক্স টাইপ ১ ও ২ : এই ভাইরাস মূলত ত্বকের সংক্রমণ করে। তবে অনেক ক্ষেত্রে চোখে বা ফুসফুসকেও আক্রান্ত করে। টাইপ ১ ভাইরাস আক্রমণে মুখের চারপাশ জ্বরঠোসা ও ফুসকুড়ি হতে পারে এবং টাইপ ২ আক্রমণ করে যৌনাঙ্গে। এটি অসতর্ক মেলামেশার মাধ্যমে অপরের দেহে ছড়াতে পারে। ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক সংক্রমণ অবশ্য যৌন মেলামেশার কারণে হয় না। বেশিরভাগ হারপিস ইনফেকশনই স্বল্পমাত্রায় হয়। তবে বিনা চিকিৎসায় তা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।

হারপিস জোস্টার (শিংগ্যাস) : এ রোগে বুকে, পিঠে বা কোমরে পানিযুক্ত ফুসকুড়ি বা র‌্যাশের মতো দেখা দিতে পারে, সাথে ব্যথা থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। যে সমস্ত রোগীর পূর্বে জলবসন্ত হয়েছে, তাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

ভেরিসেলা জোস্টার (চিকেন পক্স/জলবসন্ত): জলবসন্ত সাধারণত বাচ্চা বয়সে হয় এবং একবার হলে জীবনভর রোগীর দেহে এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। ট্রান্সপ্লান্ট রোগীর এ ধরনের ভাইরাস আক্রমণ হলে অতিসত্বর চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।

ফাঙ্গাস বা ছত্রাক ক্যানডিডা: এ জাতীয় ছত্রাক ট্রান্সপ্লান্ট রোগীর শরীরে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণত মুখে এবং গলায় এর সংক্রমণ ঘটে। তবে অপারেশনের স্থানে, চোখে, শ্বসনতন্ত্রে অথবা রেচনতন্ত্রেও হতে পারে।

রক্ত পরিচলনতন্ত্রে সবচেয়ে মারাত্মক সংক্রমণ হয়। মুখ বা গলায় সংক্রমণ হলে তাকে বলা হয় থ্রাশ। থ্রাশের কারণে মুখে সাদাটে ছোপ পড়ে যাতে ব্যথা ও ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়। ওষুধ দিয়ে ক্যানডিডা ইনফেকশনের চিকিৎসা করতে হয়।

ব্যাকটেরিয়া

ক্ষতস্থানে সংক্রমণ: অপারেশনের স্থানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটে। জ্বর, ক্ষতস্থান লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া, ব্যথা ইত্যাদি হলে চিকিৎসকের সাথে অতিসত্বর যোগাযোগ করুন। উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক খেলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

অন্যান্য সংক্রমণ ফাঙ্গাসের মতোই নিউমোসিসটিস ক্যারিনি একটি জীবাণু, যা শ্বাসনতন্ত্র সংক্রমণ করে। যাদের প্রতিরক্ষাতন্ত্র দুর্বল তারা এই জীবাণু দ্বারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। ফ্লু জাতীয় উপসর্গ সহজে ভালো না হলে অবশ্যই আপনার চিকিৎসককে জানান।

সংক্রমণ প্রতিরোধের সাধারণ উপায়

সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি। নিম্নোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে বা অভ্যাস করলে নিজেকে সহজেই সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব।

১. মাঝে মাঝে আপনার হাত দুটো সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন। এতে করে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হ্রাস পাবে

২. মুখমণ্ডল ও মুখগহ্বর হাতের সংস্পর্শে কম আনুন

৩. বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর, খাবার প্রস্তুতের পূর্বে, খাবার গ্রহণের পূর্বে বাথরুমে যাওয়ার পরে অবশ্যই হাত পরিষ্কার করতে হবে

৪. হাঁচি-কাশির সময় রুমালের পরিবর্তে টিস্যু ব্যবহার করুন এবং একবার ব্যবহারের পরে তা ফেলে দিন

৫. আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবকে আপনার অবস্থা সম্পর্কে জানিয়ে রাখুন। তাদের সাথে অসুস্থ অবস্থায় দেখা-সাক্ষাৎ না করাই বাঞ্চনীয়

৬. বদ্ধ পানি জমে থাকে এমন স্থান থেকে দূরে থাকুন। যেমন, ফুলদানি, ফুলের টব, পুকুর বা জলাশয় ইত্যাদি।

৭. বাগান করার শখ থাকলে হাতে দস্তানা ব্যবহার করুন। খালি পায়ে বাগানে হাঁটাহাঁটি করা অনুচিত

৮. উচ্চ রক্তচাপ ট্রান্সপ্লাস্ট পরবর্তী বিশেষ করে প্রথম মাসগুলোতে একটি অন্যতম সমস্যা। সেজন্য এ সময় নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাণ করানো দরকার। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ ও স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎমক দেখাবেন এবং রক্তচাপ বেড়ে থাকলে সেক্ষেত্রে ওষুধ পরিবর্তন বা বন্ধ করবেন না।

ক্যানসার

ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ব্যবহার করলে অনেকের কিছু বিশেষ ধরনের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। প্রতিরোধ প্রতিষেধক অপেক্ষা উত্তম। সেজন্য নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে স্তন, অণ্ডকোষ, ত্বক, জরায়ু ইত্যাদি রুটিন পরীক্ষা করানো উচিত। শুরুতেই ধরা গেলে চিকিৎসার ফলাফল অধিকতর ভালো হয়। মাঝে মাঝে নিজেই শরীর পরীক্ষা করতে পারেন।

ডায়াবেটিস

ট্রান্সপ্লান্ট পরবর্তী কিছু ইমিউনোসাপ্রেন্টে ওষুধে কারণে ডায়াবেটিস দেখা দেয়। শুরুতে খুবই অল্পমাত্রায় ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দেয় যেমন, অবসাদ, ক্লান্তি, পিপাসা, ওজন হ্রাস, অতিরিক্ত প্রস্রাব, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি। লক্ষণগুলো দেখা দিলে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, যাতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগের অবস্থা নির্ধারণ করা যায়। ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ওষুধের মাত্রা কমলে অথবা পরিবর্তন করলে অনেক ক্ষেত্রেই ট্রান্সপ্লান্ট পরবর্তী ডায়াবেটিস সংশোধন করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ, ইনসুলিন, খাদ্যাভাস পরিবর্তন, ওজন হ্রাসের মাধ্যমে এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

হাড়ের অসুখ

যারা কিডনির অসুখে ভুগছেন এবং স্টেরয়েড গ্রহণ করছেন, তাদের হাড়ের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ট্রান্সপ্লান্টের পরে এ জাতীয় অসুখের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ভারী ব্যায়াম পরিত্যাগ করুন, ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খান।

নিম্নোক্ত লক্ষণগুলোর কোনোটি দেখা দিলে অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন—

১. তাপমাত্রা ১০১ ফারেনহাইট বা তার বেশি বৃদ্ধি

২. সহসা এক দিনের মধ্যেই ২-৩ পাউন্ড অথবা ৩-৫ দিনের মধ্যে ৫-৭ পাউন্ড ওজন বৃদ্ধি

৩. ২৪ ঘণ্টায় প্রস্রাবের পরিমাণ কমে অর্ধেক হয়ে যাওয়া। যেমম, ১৮০০ সিসির পরিবর্তে ৯০০সিসি। অপারেশনের স্থান ব্যথা, ফোলা অথবা কোনো ধরনের নিঃসরণ দেখা দেয়া

৪. বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব হওয়া, বিশেষত বমির কারণে যদি আপনি ওষুধ গ্রহণে অক্ষম হন

৫. প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যথা বা রক্ত আসলে

৬. কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলে বা গলাব্যথা হলে

৭. আপনার রক্তচাপ পরিবর্তন হওয়া অর্থাৎ ৯০/৬০ (পারদ স্কেলে) কম বা ১৭০/১১০-এর বেশি হলে

খাদ্যাভাস

অপারেশন থেকে সুস্থ হয়ে ওষুধপথ্য অভ্যস্ত হয়ে গেলে আপনি আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে শুরু করবেন। এখন উচিত একটি সুষম খাদ্যাভাস মেনে চলা। ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের জন্য খাদ্যে তেমন বাদবিচারের প্রয়োজন নাই।

আপনি হয়তোবা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন যে, ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের সহসাই অযাচিত ওজন বেড়ে যেতে পারে। তার পেছনে বেশকিছু কারণও রয়েছে। যেমন, প্রেডনিসন জাতীয় ওষুধ খেলে রোগীর খিদে বেড়ে যায়। আবার কিছু ওষুধ খাওয়ার ফলে আপনার শরীর শর্করা ও স্নেহজাতীয় পদার্থ ভিন্নভাবে আচরণ করে। নতুন কিডনি সংযোজনের পরে আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং খাদ্যে পুনরায় রুচি ফিরে পাবেন।

ট্রান্সপ্লান্টের আগে পটাশিয়াম বা ফসফরাসের মতো খনিজের ব্যাপারে আপনাকে বাধা-নিষেধ মেনে চলতে হত। ট্রান্সপ্লান্টের পরে এ সমস্যা আর থাকে না। ক্যালরির প্রতি নজর রেখে নির্দ্বিধায় আপনি অধিকাংশ খাবারই খেতে পারবেন। কিছু ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট আপনার রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। নিয়মিত আপনার রক্ত পরীক্ষার সময় লিপিড বা চর্বি পরীক্ষা করানো হলে এটা নির্ণয় করা যায়। রক্তে চর্বির মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অনেক সময় আপনাকে লিপিড কমানোর ওষুধ খেতে হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন–

ক. সুষম খাদ্যাভ্যাস

খ. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

গ. খাবারে বৈচিত্র্য আনুন

ঘ. পরিমিত মাত্রায় চিনি ও লবণ খান

ঙ. প্রচুর পরিমাণে সবজি, ফল এবং শস্য খেতে হবে

চ. সামান্য মাত্রায় সম্পৃক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার খান

ছ. কোনো ধরনের নিষেধ না থাকলে প্রচুর পরিমাণে তরল খান। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ আউন্স অথবা ২০০০সিসি/মিলি (সেক্ষেত্রে জেনে রাখুন যে, ৩০ সিসি=১ আউন্স অথবা ২৪০সিসি= ৮ আউন্স)

ভ্যাকসিনেশন বা ইমিউনাইজেশন

ট্রান্সপ্লান্ট রোগীর লাইভ ভ্যাকসিন নেয়া নিষিদ্ধ। যে সমস্ত ভ্যাকসিন নেয়া যেতে পারে সেগুলো হচ্ছে ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস-এ, বি, হুপিং কাশি, টিটেনাস, জলাতঙ্ক ইত্যাদি। ট্রান্সপ্লান্ট রোগী ১ মাসের মধ্যে লাইভ ভ্যাকসিন নিয়েছেন এমন ব্যক্তির সংস্পর্শে (প্রস্রাব, পায়খানা বা বমি) আসতে পারবেন না। যে ব্যক্তি মুখে পোলিও ভ্যাকসিন নিয়েছে, তার ক্ষেত্রে ২ মাস তার সংস্পর্শ পরিত্যাগ করতে হবে। যদি বাচ্চার সংস্পর্শ আসতেই হয় সেক্ষেত্রে বাচ্চাকে নিষ্ক্রিয় জীবাণুযুক্ত পোলিও ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে।

ধূমপান

পূর্বে আপনার ধূমপানের অভ্যাস থাকলেও ট্রান্সপ্লান্টের পরে অবশ্যই তা পরিত্যাগ করুন। রক্ত পরিবহনতন্ত্রের ক্ষতি ও হৃদরোগ ছাড়াও ধূমপানের কারণে আপনার ফুসফুস এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যে তার পক্ষে সংক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আপনার চিকিৎসকের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করুন, তিনি ধূমপান পরিত্যাগে আপনাকে সহায়তা করবেন।

গর্ভধারণ ও নিয়ন্ত্রণ

গর্ভধারণক্ষম মহিলারা ট্রান্সপ্লান্ট পরবর্তী গর্ভধারণ সম্পর্ক চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। গর্ভধারণকালীন সময়ে কিছু ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ব্যবহার করা যায় না। প্রয়োজনে অন্য ওষুধ খেতে হবে। বেশিরভাগ পুরুষই কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের পরে সন্তানের পিতা হতে সক্ষম। বেশিরভাগ মহিলাও ট্রান্সপ্লান্টের পর সস্তান ধারণ করতে পারেন এবং স্বাভাবিক মাসিকও হয়। তবে মহিলাদের ট্রান্সপ্লান্টের ২ বছর পর গর্ভবর্তী হতে উপদেশ দেয়া হয়। এর ফলে নতুন সংযোজিত কিডনিটি আপনার শরীরের সাথে খাপ খাওয়াতে পর্যাপ্ত সময় পাবে। এছাড়া আপনার ওষুধের পরিমাণও কমে আসবে যা একটি ভ্রূণ বেড়ে উঠার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করবে। গর্ভনিরোধ পদ্ধতি ও তৎসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আপনার চিকিৎসকের সাথে খোলাখুলি আলাপ করুন।