পৃথিবীর একমাত্র প্রতিস্থাপিত আয়রন ফুসফুসধারী ব্যক্তির মৃত্যু

পৃথিবীর একমাত্র প্রতিস্থাপিত আয়রন ফুসফুসধারী ব্যক্তির মৃত্যু

আয়রন ফুসফুসধারী
পল আলেকজান্ডার - সংগৃহীত

পৃথিবীর একমাত্র প্রতিস্থাপিত আয়রন ফুসফুসধারী ব্যক্তি মারা গেছেন। মৃত্যুর আগে টানা ৭০ বছরের অধিক সময় ধরে লোহার তৈরি ক্য়াপসুলের মধ্যে বন্দি ছিলেন পোলিও আক্রান্ত ৭৮ বছর বয়সী পল আলেকজান্ডার। বিশ্বের দীর্ঘতম 'আয়রন ফুসফুসের রোগী' হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড নাম উঠে তাঁর। সূত্র : স্কাই নিউজ। 

১৯৪৬-এ জন্ম হয় পলের। মাত্র ৬ বছর বয়সেই পোলিওতে আক্রান্ত হন তিনি। সালটা ছিল ১৯৫২।

পল যখন পোলিও আক্রান্ত হন, তখন আমেরিকা জুড়ে মারাত্মকভাবে থাবা বসিয়েছে এই মারণ রোগ। ওই বছর পোলিও-কে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করে মার্কিন স্বাস্থ্য দফতর। ওয়াশিংটনের সরকারি নথি অনুযায়ী, সেবার গোটা দেশে পোলিও আক্রান্তের সংখ্যা ছড়িয়ে গিয়েছিল ৫৮ হাজার। সংক্রমিতদের সিংহভাগই ছিল শিশু।

উল্লেখ্য পোলিও আক্রান্ত হওয়ায় মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন পল। তাঁর ঘাড় থেকে শরীরের নীচের অংশ ক্রমশ অবশ হয়ে যায়। নিজে থেকে তিনি ঠিকভাবে শ্বাসও নিতে পারছিলেন না। ওই সময় পোলিওর টিকা অবিষ্কার না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েন চিকিৎসকরা।

এই অবস্থায় পলকে বাঁচিয়ে রাখতে অভিনব এক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। তাঁকে ক্যাপসুল আকৃতির লোহার তৈরি একটি যন্ত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন চিকিৎসকরা। যার পোশাকি নাম আয়রন লাং বা লৌহ ফুসফুস। এতে মাথা ছাড়া পলের গোটা শরীরটাই ঢেকে যায়। তবে এটি কৃত্রিম ফুসফুসের মতো কাজ করায় শ্বাস নিতে সুবিধা হয়েছে তাঁর।

সেই শুরু। এর পর আর কোনও দিনই ওই যন্ত্রের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেননি পোলিও পল। পরবর্তীকালে উন্নত যন্ত্র আবিষ্কার হলেও আয়রন লাং ছাড়তে চাননি তিনি। পলের যুক্তি, যন্ত্রটির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন তিনি। নতুন যন্ত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে। তাই এটা ত্যাগ করা ছিল তাঁর পক্ষে অসম্ভব।

প্রসঙ্গত, ১৯৫৫-তে বাজারে আসে পোলিওর টিকা। এরপর আমেরিকায় শুরু হয় গণহারে ভ্যাকসিনেশন। যা পরবর্তী কয়েক বছর ধরে চলেছিল। ১৯৭৯-তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পোলিও মুক্ত বলে ঘোষণা করে সে দেশের প্রশাসন। তারপরও পোলিও-র অভিশাপ আমৃত্যু বয়ে বেড়ালেন ৭৮ বছরের পল আলেকজান্ডার।