টাকার বিনিময়ে কিডনি দাতা সংগ্রহ করে ভারতে পাঠাত চক্রটি

টাকার বিনিময়ে কিডনি দাতা সংগ্রহ করে ভারতে পাঠাত চক্রটি

কিডনি
অনলাইনে বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ডোনার বা দাতা সংগ্রহ করে ভারতে পাঠাতো চক্রটি - সংগৃহীত

কিডনি কেনাবেচায় জড়িত একটি চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। তারা অনলাইনে বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ডোনার বা দাতা সংগ্রহ করে ভারতে পাঠাতো। জড়িতদের গ্রেফতারের পর কিডনিদাতা ও গ্রহীতার ভুয়া অঙ্গীকারনামা, চুক্তিপত্র, পাসপোর্ট, এটিএম কার্ড, ভারতীয় রুপি, বাংলাদেশি টাকা জব্দ করেছে র‌্যাব। 

র‌্যাবের দাবি, আটককৃত আনিছুর ভারতে গিয়ে নিজের কিডনি বিক্রি করে প্রতারিত হন। পরে দেশে ফিরে নিজেই কিডনি কেনা-বেচার ব্যবসা শুরু করেন। গত বুধবার রাতে রাজধানীর ভাটারাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন র‍্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ।

র‌্যাবের হাতে ধৃতরা হলেন- আনিছুর রহমান, আরিফুল ইসলাম রাজিব, সালাউদ্দিন তুহিন, সাইফুল ইসলাম ও এনামুল হোসেন। র‍্যাব জানায়, আনিছুর বাকি চার জনের নেতা এবং সাইফুল ইসলাম একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিক। আনিছুরের বাড়ি টাঙ্গাইলে, রাজিবের পিরোজপুরে এবং অন্যদের বাড়ি চাঁদপুরে।

র‌্যাব জানায়, দালালের প্রলভনের শিকার হয়ে ২০১৯ সালে ভারতে গিয়ে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করেন আনিছুর। আনিছুরের দাবি, কিডনির বিনিময়ে গ্রহীতার কাছ থেকে অনেক টাকা নেন দালালেরা। কিন্তু তাকে দেওয়া হয় অনেক কম। ভারতে অনেক কিডনি প্রতিস্থাপন হয়ে থাকে। সেখানে কিডনির অনেক চাহিদা। এ কারণে ভারতের কিডনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতার মাধ্যমে নিজেই কিডনি পাচার চক্র গড়ে তোলেন আনিছুর। 

ধীরে ধীরে অনলাইনে বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ডোনার বা দাতা সংগ্রহ করে ভারতে পাঠাতে শুরু করেন আনিছুর। পাঁচ জনকে গ্রেফতারের পর কিডনিদাতা ও গ্রহীতার ভুয়া অঙ্গীকারনামা, চুক্তিপত্র, পাসপোর্ট, এটিএম কার্ড, ভারতীয় রুপি, বাংলাদেশি টাকা জব্দ করা হয়েছে বলে জানান র‌্যাবের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক। 

তিনি আরও জানান, গ্রহীতা বিত্তশালী হলে প্রতি কিডনিতে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত  নেওয়া হতো। বিনিময়ে কিডনিদাতাকে দেওয়া হতো মাত্র ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। বাকি টাকার প্রায় অর্ধেক নিতো ভারতীয় চক্র। অবশিষ্ট টাকার বেশিরভাগ নিজে নিতেন আনিছুর।

এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনের কিডনি কেনাবেচা করার কথা স্বীকার করেছে চক্রটি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষকে টার্গেট করে টাকার লোভ দেখাতেন। অসুস্থদের বিনামূল্যে চিকিৎসার কথা বলেও ফাঁদে ফেলতো কিডনি কারবারি আনিছ। 

র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, চক্রটি কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করতো। একটি দল সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আরেকটি দল অভাবে থাকা মানুষের সঙ্গে কথা বলত। ট্রাভেল এজেন্টের মালিক সাইফুলের নেতৃত্বে অপর দলটি রোগীদের ভারতে পার করত। তারা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে জাল কাগজপত্রও তৈরি করত। ঢাকায় বসে টাকা লেনদেনের বিষয়সহ পুরো বিষয়টি তদারকি করতেন আনিছুর।


আরও দেখুন: