আজ বিশ্ব সমুচা দিবস: পুষ্টিগুন বিবেচনায় সমুচা

আজ বিশ্ব সমুচা দিবস: পুষ্টিগুন বিবেচনায় সমুচা

সমুচা
বিশ্ব সমুচা দিবস - ছবি: সংগৃহীত

আজ ৫ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব সমুচা দিবস। দিবসটির যাত্রা শুরুর দিনক্ষণ যথাযথভাবে কেউ উল্লেখ করে যান নি। তবে বাঙালির এমন একটা প্রিয় খাবারের জন্য বিশেষ দিবসই রয়েছে , এটিও তো বেশ চমক জাগানিয়া তথ্য। সমুচা প্রিয় ভোজনরসিকেরা দিবসটি কিন্তু উদ্‌যাপন করতেই পারেন।

বাদাম, পেস্তাবাদাম, পেঁয়াজ ও মশলার মিশেলে সিদ্ধ মাংসের কিমা গমের আটার পাতলা মোড়কে মুড়িয়ে ঘন ঘিয়ে ভাজা খাবার মোটামুটি এভাবেই সমুচাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা। তবে কালের পরিক্রমায় বাদাম, পেঁয়াজ, মশলা, মাংসের কিমার পাশাপাশি এতে যুক্ত হয়েছে আরো নানা রকম উপাদান।

বাংলাদেশ, ভারত কিংবা পাকিস্তানে খাবারটি এতো জনপ্রিয় যে, রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের দোকানেও পাওয়া যায়।

ন্যাশনাল টুডের তথ্য বলছে, দশম শতাব্দীর গ্যাস্ট্রোনমিক সাহিত্যে সমুচার উল্লেখ পাওয়া যায়। অনেক মধ্যযুগীয় ফার্সি বইয়ে 'সানবোসাগ' উল্লেখ আছে। যা সমুচার প্রাথমিক আকৃতি ও পারস্য পেস্ট্রির কাছাকাছি একটি খাবার।

চতুর্দশ শতাব্দীতে ইবনে বতুতা যখন ভারত সফর করেন, তখন তিনি মুহাম্মদ বিন তুঘলকের দরবারে ভোজসভার একটি খাবারের কথা নথিভুক্ত করেন। সেটি ছিল ত্রিভুজ পেস্ট্রিতে কিমা, মটর, পেস্তা, বাদাম দিয়ে ভরা একটি খাবার।

পুষ্টিগুন ও ক্ষতিকর দিক:

সমুচাকে আমরা সাধারণত জাঙ্ক ফুড হিসেবে জানি তারপরও একটি প্রমান সাইজের সমুচায় ১০৩- ২৫৬ ক্যালরি থেকে থাকে। বাঙালির আড্ডায় এখন সমুচার সঙ্গে সমান ভাবে জায়গা করে নিয়েছে। মুচমুচে গরম ধোঁয়া ওঠা সমুচার স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করলে বেছে নিতে হবে দেশীয় নাস্তা কেননা..

১. নিয়মিত জাঙ্ক ফুড খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। চিকিৎসকেরা জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলতে বলেন। অল্প খিদে মেটাতে বার্গার পিৎজা বহুগুণ ভালো সমুচা। সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের’ গবেষকরা বলেন, সমুচা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না হয়েও বার্গার পিৎজার চেয়ে ভালো।

২. বার্গার বানাতে লাগে চিজ এবং সস। এই দু’টোতেই থাকে ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভ যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই ভালো নয়। অন্যদিকে, আলু, সবজি দিয়ে তেল বা ঘিয়ে ভাজা হয় সমুচা।এর সবকটি উপাদানই রাসায়নিক বা প্রিজারভেটিভ ছাড়া।

৩. ময়দা, পেয়াজ বা টাটকা সবজি উপাদান দিয়েই সমুচা বানানো হয়। কিন্তু, বার্গার ব্রেড বা প্যাটিস কোনোটির উপাদানই টাটকা নয়। বার্গারের জন্য বিশেষ ব্রেড আগে থেকে বেকড করে প্রিজারভেটিভ দিয়ে রাখা হয়, যা শরীরে জন্য ক্ষতিকারক।

৪. বিশেষজ্ঞদের মতে,সিমুচায় থাকে প্রায় ৩০৮ ক্যালোরি। বার্গারের ক্যালোরি ২৯৫ থেকে ৫০০-র মধ্যে থাকে। স্বাদ বাড়াতে চিজ এবং মেয়োনেজ ব্যবহার করা হয়। যা শরীরে ক্যালোরিও বাড়ায়।

৫. হ্যামবার্গারে প্রায় ১০৮১ মিলিগ্রাম মেয়োনেজ থাকেন এবং ছোট পার্টি বার্গারে থাকে ২৫৮ মিলিগ্রাম মেয়োনেজ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেয়োনেজে প্রচুর পরিমাণ সোডিয়াম থাকে। নিয়মিত বার্গার খেলে রক্তচাপ বাড়তে বাধ্য।

৬. চায়ের সঙ্গে স্ন্যাকস খাবার আলুর সমুচা খান। ভুল করেও চিজ এবং মেয়োনেজ ভরা বার্গার খাবেন না। মেয়োনেজে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুচা বা বার্গার কোনোটাই শরীরের জন্য ভালো নয়। তবে বার্গারের বদলে মুচমুচে সমুচা বাঙালিদের কিছুটা হলেও খাবারে তৃপ্তি দেয়। হোক না জাঙ্ক ফুড, বসন্তের বিকেলে চায়ের সঙ্গে ধোঁয়া ওঠা সিঙ্গারা, মন্দ কি!