কিডনি রোগের চিকিৎসায় জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ নানা পরামর্শ

কিডনি রোগের চিকিৎসায় জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ নানা পরামর্শ

প্রতীকী ছবি

কিডনি রোগ দীর্ঘমেয়াদি। ইনফেকশন, পাথর হওয়া, প্রদাহ, আকস্মিক কিডনি বিকলসহ নানা ধরনের রোগ হয়  কিডনিতে। তবে সঠিক সময় রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা দিলে এ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।  কিডনি রোগের চিকিৎসার নানা দিক নিয়ে ডক্টর টিভির সাথে বিস্তারিত কথা বলেছেন উত্তরা আধুনিক  মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান ডা. ইউশা এ এফ আনসারী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. শারমিন ইয়াসমিন খান

ডক্টর টিভি: কিডনি রোগের কারণে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ইউটিআই হতে পারে। এটার চিকিৎসা কী?  

ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: কিডনি রোগের কারণে ৫০ শতাংশ নারীদের ইউটিআই হয়ে থাকে। পুরুষদেরও এ রোগ হতে পারে। সাধারণত সময়মতো প্রস্রাব না করা প্রস্রাব অনেকক্ষণ সময় ধরে রাখলে এ সমস্যা দেয়া। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া থেকে কিডনিতে ইনফেকশন হয়। মূত্রথলিতেও ইনফেকশন হতে যেতে পারে। অথবা দুই পাশের কিডনিতে ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে অনেক সময় কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। কিডনিতে ফোড়ার মত হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে  হাসপাতালে ভর্তি করে, শিরায় অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এছাড়াও ইউরিন কালচার টেস্ট করে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।

ডক্টর টিভি: কিডনিতে পাথর হলে সব সময় কি অপারেশনের মাধ্যমে তা বের করতে হয়? এক্ষেত্রে কোন ধরণের ওষুধ ব্যবহার করা হয়?

ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: মূত্রনালীতে পাথর থাকলে প্রস্রাবে বাধা সৃষ্টি হয়। এর ফলে কিডনি ফোলে যায়। ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়। কিডনিতে পাথর ৫ ধরনের হয়ে থাকে। চিকিৎসার জন্য দু’টি জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই দেখতে হবে পাথরের আকার কতটুকু বা এটা কোন অবস্থানে আছে।  কিডনিতে পাথরের সাইজ ১০ মিলিমিটারের কম হলে, ওষুধ সেবনের মাধ্যমে পাথর চলে যায়। অনেকের ইউরিন এর মাধ্যমে পাথর বের হয়ে গেলে পরবর্তীতে এই পাথর এনালাইসিস করে পরবর্তীতে কিডনিতে পাথর হওয়া প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

ডক্টর টিভি: কিডনির রোগ একেআই এবং সিকেডির চিকিৎসা কি?

ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: ঘন্টায় প্রস্রাব ৩০ এমএল এর কম হলে একেআই অর্থাৎ একিউট কিডনি ইনজুরির প্রথম স্টেজে থাকে। কারো প্রেসার কমে গেলে প্রস্রাবও কমে যায়। এক্ষেত্রে কিডনির কার্যক্ষমতা কিছুটা কমে যায়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করা গেলে ৯৫ শতাংশ একেআই রোগী সুস্থ হয়ে যান। একেআই বা একিউট কিডনি ইনজুরির ক্ষেত্রে রোগীকে জরুরি চিকিৎসা দিলে সুস্থ হয়ে যায়।

সিকেডি বা ক্রনিক কিডনি রোগের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ রোগী ডায়াবেটিসে ভুগেন। তাদের উচ্চ রক্তচাপ থাকতে পারে এবং কিডনি প্রদাহ হয়ে থাকে। হাইপারটেনশন রোগীদের ক্ষেত্রে ইউরিন পরীক্ষা করতে হবে। ইউরিন দিয়ে প্রোটিন গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে প্রথম ছয় মাস বা এক বছর পরপর কিডনির পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে। এভাবে সিকেডি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ডক্টর টিভি: শুধু সিকেডি না কিডনির অন্য কোন রোগের ক্ষেত্রেও ডায়ালাইসিস করা হয়?

ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: সিকেডি এবং রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি হিসেবে ডায়ালাইসিস করা হয়। কিডনি কাজ না করলে শরীরের বজ্র পদার্থ বের করতে ডায়ালাইসিস করা হয়। রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ছাড়াও হিমোডায়ালাইসিস, পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস দেয়া হয়। এছাড়াও কারো বোধ শক্তি লোপ পেলে ডায়ালাইসিস দেয়া হয়। একেআই রোগীদের ক্ষেত্রেও সাময়িক ডায়ালাইসিস দেয়া হয়। সিকেডি রোগীদের ক্ষেত্রে সারাজীবন ডায়ালাইসিস করতে হয়, যতদিন না পর্যন্ত তাদের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। যেসব একেআই রোগীদের শরীরে ফ্লুইড ওভারলোডেড হওয়া, শরীরে এসিড জমা, ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়া বা ইউরিনের আউটপুট কমে যায়, সেসব একেআই রোগীদের ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে ডায়ালাইসিস দেয়া হয়।

এছাড়া ফুসফুসে পানি জমা, শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে ডায়ালাইসিস দেয়া হয়। শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হলেও ডায়ালাইসিস দেয়া হয়। শরীরের ভেতরের বিভিন্ন ধরনের টক্সিন প্রবেশ করলেও ডায়ালাইসিস দেয়া হয়।

ডক্টর টিভি: কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে খাবার গ্রহণ এবং পানি পান করার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানতে হয় কি?

ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: সাধারণত সিকেডি রোগীদের ক্ষেত্রে খাবার গ্রহন এবং পানি পানের নিয়ম রয়েছে। ডায়বেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ডায়েট প্ল্যান মেনে চলতে হবে। বিভিন্ন কিডনি রোগীর সমস্যার ধরন বুঝে চিকিৎসকরা চিকিৎসা এবং ডায়েট প্ল্যান দিয়ে থাকেন। সিকেডি রোগীদের হার্টের রোগ থাকলে সে অনুযায়ী ডায়েট প্ল্যান মেনে চলতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। নিয়মিত পরীকা করে চিকিৎসকের ফলোআপে থাকতে হবে। ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রোগীকে মনের দিক থেকে ভালো থাকার চেষ্টা করতে হবে। সর্বোপরি লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে হবে।

ডক্টর টিভি: কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে কোন প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো?

ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো হাসপাতালে কিডনি বিভাগগুলো ভালো। তবে বিশেষ কিছু হাসপাতাল রয়েছে, যেমন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যেই পাঁচ শতাধিক কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে বিনামূল্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। এছাড়া কিডনি ফাউন্ডেশন, বারডেম ও কেয়ার হাসপাতালেও কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। সেক্ষেত্রে অপারেশন কিছুটা ব্যয়বহুল।

ডক্টর টিভি: কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে কোনো আইনি জটিলতা আছে কি?

ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: কিডনি প্রতিস্থাপন করার ক্ষেত্রে কোনো আইনি জটিলতা নেই। বাংলাদেশের আইন অনুসারে, উপযুক্ত ডোনারের কাছ থেকে কিডনি নিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে।

অনুলিখন: প্রিয়াঙ্কা হাসান