শিশুদের জন্মগত কিডনি সমস্যার লক্ষণসমূহ

শিশুদের জন্মগত কিডনি সমস্যার লক্ষণসমূহ

প্রতীকী ছবি

অনেক সময় কিডনির সমস্যা নিয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করে। চিকিৎসকরা বলছেন, মায়ের গর্ভে প্রথম তিন মাস অর্থাৎ প্রথম ১২ সপ্তাহে কিডনি গঠনকালে এ ধরনের ত্রুটি দেখা দেয়। রোগটির প্রাথমিক লক্ষণ ও কারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন এসব বিষয়ে ডক্টর টিভির সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু কিডনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শিরীন আফরোজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. শারমিন আক্তার

ডক্টর টিভি: জন্মগত কিডনি রোগ সম্পর্কে বলুন? কোন সময়ে এ ধরনের ত্রুটি দেখা দিতে পারে?

অধ্যাপক ডা. শিরীন আফরোজ: মায়ের গর্ভে প্রথম তিন মাস অর্থাৎ প্রথম ১২ সপ্তাহে কিডনি গঠনকালে জন্মগত কিডনি ত্রুটি হয়ে থাকে। এ ধরনের ত্রুটি বিভিন্ন কারণে হয়। যেমন গর্ভবতী সময়ে, মা কোনো ওষুধ সেবন করলে, মায়ের বিভিন্ন অসুখের কারণে, হরমোনাল, জিনগত, ক্রোমোসোমাল, পরিবেশগত কারণে এ ধরনের ত্রুটি হয়ে থাকে। গর্ভকালীন এ ধরনের কিডনিতন্ত্রের ত্রুটি নিয়ে একটা শিশু জন্মগ্রহণ করলে আমরা এটাকে জন্মগত ত্রুটি বলে থাকি।

ডক্টর টিভি: গর্ভাবস্থায় কি কি ওষুধ খেলে শিশুর জন্মগত কিডনি ত্রুটি দেখা দেয়?

অধ্যাপক ডা. শিরীন আফরোজ: আমরা সব সময় পরামর্শ দেই কিছু ওষুধ পরিহার করার। যেমন অনেক গর্ভবতী নারী অ্যান্টি অ্যসিডিটির অভিযোগ করেন। এক্ষেত্রে আমরা শুধু পিপিআই দিয়ে থাকি। এছাড়া অ্যান্টি ক্যান্সার ওষুধ থেকে শুরু করে অ্যান্টিবায়োটিক পর্যন্ত পরিহার করার পরামর্শ দেই।

অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে আমরা বেশি সতর্ক থাকি। এক সময় প্রচলিত ছিল সিপ্রোফ্লক্সাসিন গর্ভকালীন ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এখন দেখা যায় সিপ্রোফ্লক্সাসিন ব্যবহার হচ্ছে। তবে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, প্রথম তিন মাস অর্থাৎ প্রথম ১২ সপ্তাহে সব ধরণের ওষুধ পরিহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ডক্টর টিভি: জন্মগত ত্রুটি নিয়ে শিশু জন্ম নেয়া অথবা শিশুর ১০, ১২ বছর বা ১৮ বছর সময়ে যদি কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে লক্ষণগুলো কী?

অধ্যাপক ডা. শিরীন আফরোজ: লক্ষণ হতে পারে পশ্চাদদেশে ব্যাথা, ইউটিআই, সিস্ট সিস্টেমে সংক্রমণ, উল্টাপাল্টা কথা বলা, কার্ডিয়াক অস্বাভাবিকতা, কমসোডিয়াম, হাইপোনাট্রেমিয়া, হাইড্রোনফ্রোসিস, চোখের সমস্যা, কানে না শোনা ইত্যাদি।

ডক্টর টিভি: শিশুরা কথা বলতে পারে না, সেক্ষেত্রে জন্মগত কিডনির লক্ষণগুলো আমরা কিভাবে বুঝবো?

অধ্যাপক ডা. শিরীন আফরোজ: অ্যানুয়াল স্ক্যানিং করলে আমরা কিছু কিছু জন্মগত ত্রুটির আভাস পেতে পারি। জন্মগত কিছু কিছু রোগের লক্ষণ পেতে পারি। আর শিশুরা যেহেতু কথা বলতে পারে না, সেক্ষেত্রে তারা কান্নাকাটি করে, প্রস্রাবের দ্বারা সংকীর্ণ হয়ে যায়, প্রস্রাব আটকে যায় এবং বিশেষ করে ছেলে শিশুদের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের রাস্তায় পর্দার কারণে প্রস্রাবের বাধা সৃষ্টি হয়।

এছাড়া, প্রস্রাব ঘোলাটে হয়, প্রস্রাব থলি ফুলে ওঠে , প্রস্রাবের সাথে রক্ত যায়। এতে বাচ্চা কান্নাকাটি শুরু করে। এছাড়া মা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাচ্চার শরীরের গঠনগত কিছু তারতম্য খেয়াল করতে পারেন। তিনি যখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান তখন চিকিৎসকেরা শরীরের গঠনগত তারতম্য বুঝে আলট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান, সিটি ইউরোগ্রাম করার পরামর্শ দেন।

ডক্টর টিভি: জন্মগত কিডনি রোগের ক্ষেত্রে খাবার কিংবা ব্যায়ামের কোনো প্রভাব আছে কী?

অধ্যাপক ডা. শিরীন আফরোজ: জন্মগত ত্রুটি নিয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করলে, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তখন কিডনি ত্রুটি ধরা পড়ে। সেক্ষেত্রে খাওয়া-দাওয়া এবং ওষুধ সেবনে কিছু বাধ্যবাধকতা আছে।  তবে শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রোটিন খাবার খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে। একটি বিষয় লক্ষণীয়, যেসব খাবার শিশুদের উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে, সেগুলো পরিহার করা জরুরি।

অনুলিখন: প্রিয়াঙ্কা হাসান