দুই কারণে শিশুর আচরণগত সমস্যা হয়

দুই কারণে শিশুর আচরণগত সমস্যা হয়

প্রতীকী ছবি

শিশুর মানসিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো আচরণগত সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পিতা-মাতা, অভিভাবকরা একে মানসিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন না, পারলেও স্বীকার করতে চান না। তাই অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা হয় না বা বিলম্বিত হয়। সাধারণত এটা ছেলে-মেয়ে উভয়ের হতে পারে। এর ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা হয়?

এ বিষয়ে ডক্টর টিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য সমাধান অনুষ্ঠানের ১৯৬তম পর্বে শিশু-কিশোরদের আচরণগত সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন আমর্ড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ এবং সিএমএইচের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল. (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম।  সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. মেহনাজ রহমান

ডক্টর টিভি: শিশু-কিশোরদের আচরণগত সমস্যার বিষয়টা যদি বুঝিয়ে বলতেন?

অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম: আমরা যদি বয়স দিয়ে বিবেচিত করি তাহলে, শিশু কিশোর কিন্তু ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত। আর এই হিসাবে দেশের ৪০ শতাংশই শিশু-কিশোর। আরও একটা কথা আছে, আজকের শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। সুতারং শিশুকে গঠন করতে হবে সুন্দর করে। এমন করে গঠন করতে হবে, যাতে সে আগামীদিনে দেশের হাল ধরতে পারে। আচরণের সংজ্ঞা যদি বলি তা হলো- আমরা যা কিছু করি, তা যদি দেখা যায়, পরিমাপ করা যায় তাই আচরণ।

এখন আমরা কথা বলবো আচরণের সমস্যা নিয়ে। এটা এমন একটা সমস্যা যে আমার শিশু আমার কথা শোনে না। আমার শিশু পড়তে বসেনা, পড়তে বসলে খেলাধুলা করতে চাই, স্কুলে গেলে পালিয়ে যায়, স্কুলের ক্লাসটা ঠিকমত করে না। এমনকি আমার সেই শিশু কিশোরটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইভটিজিং করে, মারামারি করে। এছাড়াও আজকাল যে শিশু গ্যাং বলে একটা কথা আসছে সেটাও কিন্তু এটারই অংশ। এটিই যদি হয় একটা শিশুর আচরণ তাহলে আমরা তাকে বলি শিশু-কিশোরদের আচরণগত সমস্যা বা Conduct disorder।

ডক্টর টিভি: শিশু-কিশোরদের আচরণগত সমস্যার কারণটা কী?

অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম: শিশু-কিশোরদের আচরণগত সমস্যার কারণকে আমরা দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি। একটা হলো- ব্যক্তিগত কারণ। আর একটা হলো- পারিবারিক কারণ। ব্যক্তিগতটা হল বংশ পরম্পরায়। যেমন: বাবা বা পরিবারের এরকম আচরণগত সমস্যা ছিল সেখান থেকে আসতে পারে। আবার কিছু কিছু সময় শিশুর মস্তিষ্কের বায়ো-কেমিক্যাল পরিবর্তন হয় সেটার জন্যও হতে পারে। অনেক সময় শিশু জন্ম নেয়ার সময় মায়ের অক্সিজেন সমস্যা ছিল, এটাও একটা কারণ হতে পারে।

আর একটা হল বেড়ে ওঠার বিষটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে আমি পারিবারিক সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করছি। কিভাবে সে বেড়ে উঠলো? সে যদি পরিবারে সঠিক ভালোবাসা না পেয়ে বেড়ে উঠে। যেমন: তাকে বুঝানোর থেকে মারা হয় বেশি, তাকে সব সময় অনর্থক গালি দেয়া হয়। এছাড়াও পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর ভেতর ঝগড়া, মারামারি লেগে থাকে। এসব কারণেই শিশু কিশোরদের আচরণগত সমস্যা হয়। বাবা-মায়েরা যখন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারে তখন ওই শিশু-কিশোরদের আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়।

ডক্টর টিভি: শিশু-কিশোররা অনলাইনে ঝুঁকে পড়ার সমস্যা সম্পর্কে কিছু বলুন।

অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম: প্রতিটি জিনিসের একটা সুফল আর একটা কুফল থাকে।  আমরা পিতা-মাতারাও কিন্তু কাজ থেকে ফিরে এসে মোবাইল নিয়ে বসে যাচ্ছি এবং ফেসবুক, ইউটিউব চালাতে শুরু করি।  তখন শিশুদের প্রতি তাদের নজর থাকে না।  ফলে ওই শিশুর বিকাশ রোধ হয়ে যাচ্ছে। সে আর বাবা-মায়ের সাথে মিশছে না এবং বাবা-মায়ের আদর নিচ্ছে না।

অনেক সময় পিতা-মাতাই শিশুর হাতে মোবাইল তুলে দেন। কিন্তু পিতা-মাতারা ভুলে যান, তাদের শিশুদের মোবাইল চালানোর বিষয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা দিতে হবে। ফলে ওই শিশু মোবাইল দেখতে দেখতে এক সময় আসক্ত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে শিশু আর অন্যের সাথে মিশতে ও সামাজিক হতে পারছে না।

ডক্টর টিভি: শিশু-কিশোরদের আচরণগত সমস্যার প্রাথমিক চিকিৎসা কী? 

অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম: শিক্ষার জন্য পরিবারই কিন্তু প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান। আবার পরিবারই শিশু-কিশোরদের আচরণগত সমস্যার চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান। এখানে পরিবারকে দুটি জিনিস করতে হবে। প্রথম হলো শিশুদেরকে ভালোবাসাটা দিতে হবে। এখানে আবার ভালোবাসাটা শুধু ভালোবাসা হলে হবে না, এর সাথে নিয়মানুবর্তিতা আনতে হবে। এখানে শিশু যদি কোন ভুল করে তাহলে তাকে শাস্তির ব্যবস্থা  করতে হবে।  তবে আমরা শারীরিক শাস্তির কথা বলছি না।  তাহলে প্রশ্ন আসে শাস্তিটা আবার কেমন হবে?

শাস্তিটা হবে এমন, ধরুন ওই শিশু হরলিক্স খেতে পছন্দ করে। এখন তাকে বলেন আমি বারবার নিষেধ করার পরেও তুমি এই কাজটা করেছো এজন্য আজ তোমাকে হরলিক্স দিবো না। এই হরলিক্স না দেওয়াটাই তার জন্য শাস্তি। সুতরাং এভাবে নিয়মানুবর্তিতা আনতে হবে।  এর সাথে আপনার শিশুর বেড়ে উঠার পদ্ধতিটা যেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হয়। যেমন: আপনি আপনার বাচ্চাকেও পরিবারের বিষয়ে কথা বলতে দেয়া। তার মনের কথা শুনে তার মতকেও প্রাধান্য দেয়া।

আর দ্বিতীয় বিষয় যেটা করা যেতে পারে, সেটা হলো- আপনি আপনার শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দেন। তাকে সাথে নিয়ে যখনই সুযোগ পান তখন খেলাধুলা করেন, কবিতা আবৃত্তি ও গানের আসর করতে পারেন। তাহলে কিন্তু শিশু-কিশোরদের আর আচরণগত সমস্যা হবে না। আর একটা বিষয় হলো আপনার শিশুর মোবাইল, ইন্টানেট ব্যবহারের বিষয়ে আপনাকে নজর রাখতে হবে। কখন কী বিষয়ে কী দেখছে সেটার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।  যাতে করে ডিজিটাল মাধ্যমের অপব্যবহার না করে।