কিডনি রোগ প্রতিরোধ সহজ, চিকিৎসা জটিল ও ব্যয়বহুল: অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ

কিডনি রোগ প্রতিরোধ সহজ, চিকিৎসা জটিল ও ব্যয়বহুল: অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ

কিডনি রোগ
কিডনি রোগ প্রতিরোধ সহজ, চিকিৎসা জটিল ও ব্যয়বহুল (ইনসেটে অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ) - সংগৃহীত

প্রাণঘাতী কিডনি রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল। অথচ, জনসাধারণকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে ডক্টর টিভিকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটির (ক্যাম্পস) চেয়ারম্যান এবং আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ। 

তিনি জানান, বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি কিডনি রোগী আছে। ঠিকমত চিকিৎসা গ্রহণ না করায় বছরে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার লোকের কিডনি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। 

অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীর হার শতকরা ১৬ থেকে ১৮ ভাগ। এর শেষ ধাপ হলো কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া। একবার কিডনি বিকল হলে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় কিডনি সংযোজন অথবা ডায়ালাইসিস। কিন্তু এই চিকিৎসা এতটাই ব্যয়বহুল যে, শতকরা ৯০ ভাগ কিডনি বিকলরোগী তা বহন করতে পারে না। তারা বিনা চিকিৎসায় কিংবা স্বল্প চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করেন। পক্ষান্তরে, কিডনি রোগের ব্যাপকতা, ভয়াবহতা, পরিণতি ও কারণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সুস্থ জীবন ধারা সম্পর্কে তিনি জানান, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম করা, পরিমিত স্বাস্থ্যসম্মত বা সুষম খাবার গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান পরিহার করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করা, তীব্র মাত্রার ব্যাথার ওষুধ এড়ায়ে চলা। তাছাড়া যারা ঝুঁকিতে আছেন যেমন যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বেশী, বংশে কিডনি রোগ আছে, যারা ধূমপায়ী, যারা তীব্র মাত্রার ব্যথার ওষুধ খেয়েছেন, যাদের পূর্বে কোন কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে তাদের বছরে অন্তত ২ বার প্রস্রাব ও রক্তে ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ। কেননা প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ সনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।  

অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, মাত্র দুটি পরীক্ষা করে কিডনির রোগ সহজেই নির্ণয় করা যায়। একটি হলো প্রস্রাবের অ্যালবুমিন যাচ্ছে কি না, সেই পরীক্ষা। আরেকটি হলো ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা। প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ ধরা পড়লে অনেক জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা যায়।

সম্ভাব্য কিডনি রোগী বা কিডনিরোগে আক্রান্তের ঝুঁকিতে কারা আছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কিডনিরোগে আক্রান্তের ঝুঁকি অনেক বেশি। অনেক সময় তাদের প্রস্রাবে অ্যালবুমিন যায়। এটা কিডনি আক্রান্তের লক্ষণ। শুরুতেই যদি এর চিকিৎসা করা যায়, তাহলে অল্পতেই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে যাবে। তাছাড়া রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা পরীক্ষা করেও কিডনি রোগ আছে কি-না তা নিরূপণ করা যায়। 

কিডনি প্রতিস্থান সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, দেশে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করাতে সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় তিন লাখ টাকার মতো। বেসরকারিতে খরচ পড়ে ৭ লাখ টাকার মতো। অপরদিকে, দেশের বাইরে ভারতে কিংবা চীনে গেলে এই খরচ পড়ে ৪০ লাখ টাকা। আইনী জটিলতা ও প্রচারণার অভাবে মানুষ এখনও বিদেশে গিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করাচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন ২০১৮ অনুযায়ী, জীবন রক্ষায় ২২ ধরনের আত্মীয়ের কাছ থেকে কিডনি নেওয়া যাবে। নিকটাত্মীয় হচ্ছেন- মা, বাবা, ছেলে, মেয়ে, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী ও আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা, নানা, নানি, দাদা, দাদি, নাতি, নাতনি এবং আপন চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাই বা বোন। এই তালিকার বাইরে অন্য কারও শরীর থেকে কিডনি নিয়ে অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করার আইনি কোনো সুযোগ আমাদের দেশের আইনে নেই। দেশে কিডনি রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার্থে প্রচলিত আইন সংশোধনের দাবি জানান তিনি। 


আরও দেখুন: