মহাসড়কের পাশের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আধুনিকায়ন জরুরি

মহাসড়কের পাশের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আধুনিকায়ন জরুরি

জরুরী চিকিৎসা
হাসপাতালের জরুরি চিকিৎসা (ইনসেটে ডা. বাহারুল আলম) - ফাইল ছবি

জ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা উপকরণের ঘাটতি– চিকিৎসকের অবহেলা হিসাবে বিবেচিত হওয়া উচিৎ নয়। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিরাই শাস্তি পাওয়া উচিৎ। প্রান্তিকের জনগণের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নাজেল হওয়ার পর সেখানে চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবলকে জরুরি চিকিৎসার জন্য কোন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না।

চিকিৎসা একটি সমন্বিত কার্যক্রম। যদি চিকিৎসা দেওয়ার কোনকিছুর ঘাটতি থাকে তাহলে চিকিৎসা প্রদান বাধাগ্রস্ত হয়। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও মুমূর্ষু ডা. তপন মণ্ডলের প্রাথমিক চিকিৎসায় এরূপ ঘাটতির কারণে সম্ভাবনাময় জরুরি চিকিৎসা প্রদান করা যায়নি বলে সে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেছে। কাশিয়ানী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সে সকল ভুল বা সিদ্ধান্তের কারণে ডা. তপন মণ্ডলকে বাঁচানো যায়নি তা নিম্নরূপ হতে পারে--

১) জরুরি অবস্থায় মুমূর্ষু রোগীর প্রাথমিক পরিচর্যা জ্ঞান ও উপকরণের ঘাটতি।

২) দূরবর্তী স্থান ঢাকায় রেফার না করে কাছাকাছি খুলনা মেডিকেল কলেজ/খুলনা আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠালে রোগীর তাৎক্ষণিক চিকিৎসার মাধ্যমে হয়ত মৃত্যু ঠেকানো যেত। কারণ এখানে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনীয় জনবল, ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ আছে। কর্তব্যরত চিকিৎসকের মাথায় এই ভাবনা আসেনি।

৩) নিদেনপক্ষে ডা. তপন মণ্ডলের নিজের কর্মস্থল গোপালগঞ্জ সায়রা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে জীবনরক্ষার প্রাথমিক পরিচর্যা পেত।

মহাসড়কের পাশে অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও মুমূর্ষু রোগী পরিচর্যার জন্য এ সকল অব্যবস্থা ও ঘাটতির সমুদয় দায়- স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সদা পরিবর্তনশীল স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের উপর বর্তায়। তারা এ ধরণের অপূর্ণাঙ্গ ও ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে জনগণের সাথে প্রতারণা করে চলেছে। এরূপ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতা, চিকিৎসক ও জনগণ প্রতিবাদ করলে অবশ্যই প্রতিকার হত।

প্রতিবাদ হয়না কারণ এরূপ প্রতিবাদ সরকার তার বিরোধী বলে আক্রমণ করে। সরকারের এরূপ আক্রমণের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না।

অপরদিকে সরকারের রাজনীতির তাঁবেদার চিকিৎসকরাও প্রতিবাদ করে না। ডা. তপন মণ্ডলের চিকিৎসায় অবহেলার মধ্য দিয়ে যে চিত্র ফুটে উঠেছে– এ অব্যবস্থা আর এক মুহূর্ত চলতে দেওয়া যায় না। যারা এ অব্যবস্থার জন্য জন্য দায়ী তারা কখনও শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছে না। বরং তারা পুরস্কৃত হয়ে পদন্নোতি পাচ্ছে। জনগণ ও বিএমডিসি এ অপরাধীদের শাস্তির উদ্যোগ নিতে পারে।

এভাবে অগোচরে প্রান্তিকের অখ্যাত কত জনগণ প্রতিদিন চিকিৎসাসহ নানাবিধ অবহেলার শিকার হচ্ছে বা মারা যাচ্ছে তার হিসাব রাষ্ট্রে সংরক্ষিত হয়না। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ব্যক্তিরা অভিযুক্ত হয় না, অধস্তনরা অভিযুক্ত হয় ও শাস্তি পায়। কখনও কখনও জনগণের মাইর খায়।

উপরে বর্ণিত চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য দায়ী রাষ্ট্র শাসনে সরকার ও রাজনীতির উদাসীনতা , দুর্বৃত্তায়ন ও কোন অব্যবস্থাকে আমলে না নেওয়ার প্রবৃত্তি।