প্যানিক অ্যাটাক বা ডিসওর্ডার কি?

প্যানিক অ্যাটাক বা ডিসওর্ডার কি?

প্যানিক অ্যাটাক
প্যানিক ডিসওর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি (ইনসেটে ব্রেইন, স্নায়ু ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাঈদ এনাম) - ফাইল ছবি

প্যানিক অ্যাটাকঃ

সাধারণত কোন কারন ছাড়াই হটাৎ করে স্বল্প সময়ের জন্যে তীব্র ভয়ের উদ্রেক হওয়া পেতে সেই সাথে বেশ কিছু শারীরিক উপসর্গ থাকা'কেই বলে প্যানিক অ্যাটাক।

প্যানিক অ্যাটাকের শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ হলো,

* বুক ধরফর করা,

* ঘেমে যাওয়া,

* শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুততর হতে থাকা,

* শ্বাসপ্রশ্বাস আটকে যাবার মতো অবস্থা

* হাত পা কাঁপতে থাকা,

* বুকে চাপ অনুভূত হওয়া,

* মাথা ঘোরানো, ঝিম ঝিম, মাথায় শুন্যতা সৃষ্টি,

* সারা গা বেয়ে ঝিন ঝিন শিন শিন করে অনুভূতি উঠা,

* নিজেকে বাস্তবতা থেকে হারিয়ে ফেলা,

* এই বুজি মরে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মরে যাবো এ রকম মনে হওয়া


প্রচন্ড রকমের ভয় রোগী গ্রাস করে ফেললেও মূলত এই উপসর্গগুলো মনের ভুল।

প্যানিক অ্যাটাক অবস্থা খুব বেশী সময় স্থায়ী থাকে না। শারীরিক ও মানসিক উপসর্গগুলো সাধারণত ১০ মিনিটের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যায় এবং তা প্রায় ১৫/২০ মিনিট স্থায়ী থাকতে পারে।

পুরো ব্যাপারটি অল্প সময়ের জন্যে হলে এ অবস্থা একজন আক্রান্ত রোগীর জন্যে ভয়ানক যন্ত্রণার বিষয়। কারণ এসকল মানসিক ও শারীরিক উপসর্গ কয়েক মিনিট থাকাই একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে ভীষণ কস্টের।

প্যানিক অ্যাটাক হয় যার হয় কস্টটা একমাত্র তিনিই বুঝেন। তার কাছে মনে হয় সকল উপসর্গই বাস্তব এবং তিনি মারা যাচ্ছেন।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, এটি যে একটি মানসিক রোগ এবং এ থেকে নিরাময় সম্ভব এটা অনেকেই জানেন না।


প্যানিক ডিসওর্ডার কি?

একজন মানুষের যখন বার বার প্যানিক অ্যাটাক হয় বা প্যানিক অ্যাটাক হবে এই সারাক্ষণ যখন একজন মানুষ থাকে তখন এ অবস্থাকে বলে 'প্যানিক ডিসওর্ডার'।

প্যানিক ডিসওর্ডার রোগ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে মারাত্মক ব্যাহত করে। প্যানিক অ্যাটাকের সময় রোগী যদিও মনে করেন যে, তিনি এই বুঝি মারা যাচ্ছেন, কিন্তু আসলে প্যানিক ডিসওর্ডার রোগে কেউই মারা যাননা। কি এ চিন্তা বা এরকম অ্যাটাক তার স্বাভাবিক জীবনযাপনে বিঘ্ন ঘটায়।

অনেকের আবার প্যানিক অ্যাটাক হয় নির্দিষ্ট কোন নির্দিষ্ট স্থানে গেলে। এগুলো এমন স্থান যেখান থেকে থেকে সহসা বের হয়ে সম্ভব না সেরকম। যেমন,

* কোন ভীড় কোলাহল,

* জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানস্থল

* ক্লাব, মার্কেট, বাজার, শপিং মল,

* বদ্ধ ঘর বা আবদ্দ হল ঘর

* জনাকীর্ণ বিয়েবাড়ি বা কমিউনিটি সেন্টার

* লিফটের ভিতর,

* প্লেন, ট্রেন, বাস বা স্টিমারের ভিতর

* উঁচু দালানের ছাদ কিংবা

* কোন উঁচু ব্রীজ।

অবাক করার বিষয় হলো এ সকল স্থানে গেলে রোগীর প্যানিক অ্যাটাক হয় এজন্যে তিনি এসব জায়গা এড়িয়ে চলেন। এ অবস্থাকে বলে 'প্যানিক ডিসওর্ডার উইথ এগোরা ফোবিয়া' (Panic Disorder with Agoraphobia)। 

এগোরাফোবিয়া (Agorakhobia) হলো গ্রীক শব্দ। গ্রীক 'এগোরা' শব্দের অর্থ জনাকীর্ণ বা কোলাহলে পরিপূর্ণ স্থান, মার্কেট প্লেস বা এসেম্বলি প্লেস আর 'ফোবিয়া' অর্থ ভয়। অর্থাৎ জনাকীর্ণ বা কোলাহল পূর্ণ স্থানে যেতে ভয়।

চিকিৎসাঃ

প্যানিক ডিসওর্ডার এর জন্যে অনেক রোগী প্লেনে চড়েন না। বার বার প্লেনে বা ট্রেনে চড়ে আবার বের হয়ে আসেন। আমি এমন অনেক পেশেন্ট পেয়েছি। তবে এই প্যানিক ডিসওর্ডার চিকিৎসা রয়েছে।

সাইকোথেরাপি, রিলাক্সেশন থেরাপি, সেরোটোনিন রি-আপটেক ইনহিবিটর (SSRI) অত্যন্ত কার্যকরী। রোগী ঔষধ সেবন ও সাইকোথেরাপিতে সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে যান। ফিরে আসেন স্বাভাবিক জীবনে।

পরামর্শ দিয়েছেন-

ডা. সাঈদ এনাম (ব্রেইন, স্নায়ু ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ) 
এমবিবিএস (ডিএমসি) এমফিল (সাইকিয়াট্রি) বিসিএস (হেলথ)
সহকারী অধ্যাপক সাইকিয়াট্রি
সিলেট মেডিকেল কলেজ।
ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন