অটিজমঃ মিথস এন্ড ফ্যাক্টস

অটিজমঃ মিথস এন্ড ফ্যাক্টস

অটিজম
অটিজমঃ মিথস এন্ড ফ্যাক্টস (বামে ডা. মাহাবুবা রহমান) - সংগৃহীত

অটিজম মস্তিষ্কের বিকাশজনিত একটি সমস্যা, ইংরেজীতে যাকে বলে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার। এই রোগে বাচ্চার সামাজিক যোগাযোগ ও মনের ভাবের আদান প্রদান ব্যহত হয়। সেই সাথে বাচ্চার মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু কাজ, নির্দিষ্ট কিছু আচরণ বারবার করার প্রবনতা দেখা যায়, এবং সেসকল নির্দিষ্ট কাজ বাচ্চার নির্ধারিত নিয়মের ভিতর করতে না পারলে বাচ্চার মধ্যে অস্থিরতার প্রকাশ পায়।

অটিজম বিষয়ক বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক প্রচারের কল্যানে এই বিষয়গুলো কমবেশি সবাই আজকাল জানে। কিন্তু অতিরিক্ত প্রচার প্রচারনা করতে গিয়ে অটিজম সম্পর্কিত অনেক ভুল ধারনার প্রচার করা হয় প্রায়ই, যে বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন করতেই আজকের এই লেখা। চলুন তাহলে অটিজম সম্পর্কিত কিছু মিথস এবং ফ্যাক্টস জেনে নেয়া যাক।

মিথ ১ঃ 'অটিজম কোন ব্যাধি নয়।'

ফ্যাক্টঃ অটিজম যেহেতু একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার, সেহেতু অটিজম অবশ্যই একটি ব্যাধি। অটিজমে আক্রান্ত শিশু বৈষম্যের শিকার হবে ভেবে অনেকে অটিজমকে কোনো ব্যাধি বলতে চান না৷ এটি ঠিক যে আমাদের সমাজে এখনো নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারের শিশুরা নানাক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়। তবে তার সমাধান এটি নয় যে অটিজমকে ব্যাধির আওতায় আনা যাবেনা। বরং এটি করলে অটিজমে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা ব্যহত হবে, সে তার সম্ভাবনাগুলো থেকে পিছিয়ে পড়বে এবং অটিজমের শিশুরা যে কিছু বিশেষ সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে সেই সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হবে। তাই অটিজমে আক্রান্ত শিশুর কল্যানের জন্যই অটিজমকে ব্যাধি বলা প্রয়োজন।

মিথ ২ঃ 'ডিভাইস আসক্তি এবং বাবা-মা পর্যাপ্ত সময় না দেয়ার কারণেই বাচ্চার অটিজম হয়।'

ফ্যাক্টঃ খুবই দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের দেশে অটিজম সংক্রান্ত অনেক বড়বড় সভা, সেমিনারে এই ভুল ধারনাটি ঢালাওভাবে প্রচার করা হয়। ডিভাইসে আসক্তি কিংবা বাচ্চাকে অভিভাবকের কোয়ালিটি টাইম না দেয়া, দুটি বিষয়ই শিশুর মধ্যে অনেকরকম সমস্যার জন্ম দেয়, কিন্তু সেগুলোর মধ্যে আর যাই হোক অটিজম নেই। কারন হিসেবে সেই একই কথা- অটিজম একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার। অর্থাৎ কোনো শিশু অটিজমে আক্রান্ত হবে কিনা সেটা তার জন্মের সময় থেকেই নির্ধারিত হয়ে যায়। অনেকে বলেন আমার শিশুতো দেড় বছর বয়স পর্যন্ত সম্পূর্ন স্বাভাবিক ছিল, তারপর থেকে ওর মধ্যে অটিজমের লক্ষনগুলো দেখেছি। এটার অর্থ এই নয় যে অটিজমের আবির্ভাব বাচ্চাটির দেড় বছর বয়েসে হয়েছে, বরং অটিজমের লক্ষণগুলোর প্রকাশ এই সময়ে হয়েছে বলাটা যৌক্তিক। এবং এই ফ্যাক্টটি মেনে নিতে পারলে সন্তানের অটিজমের পেছনে একমাত্র কারন হিসেবে তার বাবা-মাকে দোষারোপ করা অনেক ক্ষেত্রেই বন্ধ করা যাবে৷

মিথ ৩ঃ অটিজমের শিশুরা অন্যান্য শিশুদের চেয়ে তীক্ষ্মবুদ্ধির অধিকারী। তারা চাইলেই যেকোনো খুব বড় কিছু করে ফেলতে পারে।

ফ্যাক্টঃ অটিজমের শিশুদের অনেক বিশেষ গুনাবলী থাকে এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ এবং তাদের চরিত্রের সেসব বিশেষ জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করা উচিত৷ কিন্তু তারা চাইলেই যুগান্তকারী কিছু করে ফেলতে পারে এইধরনের চিন্তা আসলে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের তার প্রকৃত সক্ষমতায় পৌছাতে বাধা দেয়। অনেকেই আইন্সটাইন, এডিসন প্রমুখ বিজ্ঞানীদের অটিজম ছিল এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে ঢালাওভাবে সব অটিজমের শিশু উচ্চ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বলে প্রমান করতে চান। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক উলটো। গবেষনায় দেখা গেছে প্রায় ৯০% অটিজমে আক্রান্ত শিশুর ইন্টেলেকচুয়াল ইম্পেয়ারমেন্ট থাকে এবং অন্তত ৫০% এর থাকে ইন্টেলেকচুয়াল ডিজএবিলিটি। এই ফ্যাক্টটা জানার উদ্দেশ্য অটিজমের শিশুদের অবহেলা করা নয় বরং তাদের সীমাবদ্ধতার জায়গা সম্পর্কে জানলে পরিবারের সদস্যদের তার সম্ভাবনাগুলো নিয়ে কাজ করা সহজ হয়।

আগামী ২ এপ্রিল, বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। অটিজম সম্পর্কিত সচেতনতা তখনই সম্ভব যখন এর সম্পর্কে সঠিক তথ্যগুলো আমরা জানব। ভুল তথ্য, মিথ্যা আশ্বাস অটিজম শিশুর পরিবারের কষ্ট কমায় না বরং বাড়ায়। কাজেই অটিজমে আক্রান্ত শিশুর সার্বিক মংগলের জন্যই অটিজমকে সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন।

লেখকঃ

ডা. মাহাবুবা রহমান
শিশু কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
রেজিস্ট্রার, ডিপার্টমেন্ট অব সাইকিয়াট্রি
মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন এন্ড হসপিটাল।


আরও দেখুন: