হৃদরোগ চিকিৎসায় শিশুর বুকে বসানো হলো গরুর শিরা

হৃদরোগ চিকিৎসায় শিশুর বুকে বসানো হলো গরুর শিরা

হৃদরোগ
গরুর গলার শিরা কেটে বিশেষভাবে প্রস্তুত শিরা তৈয়বার বুকে বসানো হয়েছে। - প্রতীকী ছবি

গরুর গলার শিরা স্থাপনের মাধ্যমে নতুন জীবন পেল পাঁচ বছরের এক শিশু। হৃদরোগ থেকে বাঁচাতে বিরল অস্ত্রোপচারে নতুন নজির সৃষ্টি করলো চিকিৎসকরা।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার এনআরএস মেডিকেল কলেজের কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি বিভাগে এই প্রথম হার্টের ভাল্ব পাল্টানোর এই ‘রস অপারেশন’ হয়েছে।

সংবাদ প্রতিদিন জানায়, তৈয়বা খাতুন নামের ওই শিশু মুর্শিদাবাদের কান্দির তেঁতুলিয়ার বাসিন্দা। জন্ম থেকেই তার শ্বাসকষ্ট। একটু হাঁটলেই বুকে ব্যথা করে। তখন বুকে হাত চেপে বসে পড়ে সে।

একের পর এক চিকিৎসক পরিবর্তন করেও সুরাহা না মেলায় শিশু কন্যাকে নিয়ে এনআরএসের শিশু বিভাগের আউটডোর যান মা। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক শিশুটিকে পাঠিয়ে দেন কার্ডিওথোরাসিক সার্জারিতে। টিকিটে লিখলেন, ‘কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ’। পরের সপ্তাহ ফের আউটডোরে নেওয়া হয়।

বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. পরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাচ্চাটাকে দেখেই মনে হলো যেকোনো সময় অঘটন ঘটতে পারে। হার্ট ফেলের সম্ভাবনা ব‌্যাপক। তাই সঙ্গে সঙ্গে ইকো কার্ডিওগ্রাফি করতে পাঠাই।’

তিনি বলেন, ‘বাচ্চাটার হার্টের অ্যাওর্টিক ভাল্বে জন্ম থেকেই সমস্যা। তাই ভাল্ব পাল্টানো দরকার। কিন্তু শিশু বড় হলে নতুন ভাল্বকেও সমানতালে বড় হতে হবে। তাই করা হলো রস অপারেশন।’

স্বাস্থ্য দপ্তরের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে এর আগে এমন অস্ত্রোপচার হয়নি। সেই হিসেবে তৈয়বাই প্রথম।

গত ১৬ নভেম্বর স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় অস্ত্রোপচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফিরিয়ে আনা হয় আইটিইউ চেম্বারে। মাঝে একটা সময়ে ফুসফুস থামিয়ে কৃত্রিমভাবে রক্ত সঞ্চালন করানো হয়।

গরুর গলার শিরা কেটে বিশেষভাবে প্রস্তুত যে শিরা তৈয়বার বুকে বসানো হয়েছে, তার দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০ মিলিমিটার, ব্যাস ১৪ মিলিমিটার। এই শিরা দিয়ে রক্ত সঞ্চালন সহজ হবে।

অধ্যাপক ডা. পরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ও যত বড় হবে, ফুসফুসও সমানভাবে বড় হবে। তাই একটু বড় শিরা বসানো হয়েছে।’

স্বাস্থ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, তৈয়বা এখন সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত। সোমবার রাতে মায়ের কোলে চেপে সে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে গেছে।


আরও দেখুন: