সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে দেশেই হৃদপিণ্ডের ভাল্ব প্রতিস্থাপন

সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে দেশেই হৃদপিণ্ডের ভাল্ব প্রতিস্থাপন

সার্জারি
রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সময় রোগী, রোগীর স্বজন এবং এভারকেয়ারের চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন। - ছবি: সংগৃহীত

সর্বাধুনিক ট্রান্সক্যাথেটার এওর্টিক ভাল্ব রিপ্লেসমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে এক রোগীর সফলভাবে ভাল্ব প্রতিস্থাপন করেছে রাজধানীর এভারকেয়ার হসপিটাল।

রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সময় রোগী, রোগীর স্বজন এবং এভারকেয়ারের চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৭২ বছর বয়সী কাজী মো. আব্দুর রউফ কিডনি, ফুসফুস ও বার্ধক্যজনিত জটিলতাসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে এভারকেয়ার হসপিটালে ভর্তি হন। আগে তার বাইপাস সার্জারিও হয়েছিল।

যথাযথ পর্যবেক্ষণের পর দেখা যায়, রোগীর হৃদপিণ্ডের একটি ভাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে। তখন দায়িত্বরত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মো. শাহাবউদ্দিন তালুকদার রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে ট্রান্সক্যাথেটার এওর্টিক ভাল্ব রিপ্লেসমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে ভাল্ব প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন।

এরপর রোগীর সম্মতিতে সফলভাবে ভাল্ব প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করে এভারকেয়ার হসপিটালের চিকিৎসকরা। বর্তমানে রোগী সুস্থ আছেন।

উল্লেখ্য, এই চিকিৎসার মাধ্যমে দেশে তৃতীয়বারের মতো ট্রান্সক্যাথেটার এওর্টিক ভাল্ব রিপ্লেসমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।

এভারকেয়ার হসপিটালের ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. মো. শাহাবউদ্দিন তালুকদার বলেন, মানুষের হৃদপিণ্ডে ৪টি চেম্বার থাকে এবং প্রতি চেম্বারে ২টি করে ভাল্ব থাকে। ভাল্বগুলোর শরীরে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে।

তিনি বলেন, এই ভাল্বগুলোর মধ্যে এওর্টিক ভাল্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসহ অন্যান্য সকল অঙ্গে অক্সিজেনেটেড রক্ত সরবরাহ হয়ে থাকে। তবে কিছু কারণে ভাল্বটি সরু হয়ে যায় এবং শরীরের স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে মানবদেহে নানা সমস্যা ও জটিলতা সৃষ্টি করে।

এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, সাধারণত এওর্টিক ভাল্ব স্টেনোসিস ওপেন হার্ট সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হলেও, তা বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সার্জারির বিকল্প হিসেবে ট্রান্সক্যাথেটার এওর্টিক ভাল্ব রিপ্লেসমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এটি একটি মিনিম্যালি ইনভেসিভ প্রসিডিউর (যেমন- হার্টে রিং প্রতিস্থাপন) এবং পদ্ধতিটি খুব একটা জটিল না হলেও এতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হয়।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এই পদ্ধতি অহরহ ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি নতুন। এভারকেয়ার হসপিটাল প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক সকল প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা থাকায় আমরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে রোগীর ভাল্ব প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি।

চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে রোগী বলেন, অভিনব এই পদ্ধতিতে আমার চিকিৎসা সফলভাবে সম্পন্ন করায় এভারকেয়ার হসপিটালে দায়িত্বরত চিকিৎসকবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি এখন অনেকটাই সুস্থ অনুভব করছি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এভারকেয়ার হসপিটালের ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম রেজা, সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. তামজীদ আহমেদ, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. কাজী আতিকুর রহমান, কার্ডিওভাস্কুলার ও থোরাসিস সার্জারির সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. জুলফিকার হায়দার, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও কো-অর্ডিনেটর ডা. সোহেল আহমেদ, পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও কো-অর্ডিনেটর ডা. তাহেরা নাজরীন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রত্নদীপ চাস্কার, চিফ মার্কেটিং অফিসার ভিনয় কাউল।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন এভারকেয়ার হসপিটালের মেডিকেল সার্ভিস বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. আরিফ মাহমুদ।