- ডা. টি আই খান ওয়াসিম
- ২৯ নভেম্বর ২০২১, ১৯:৩৬
হৃৎপিণ্ড সুস্থ-সবল রাখতে প্রাত্যহিক এই নিয়মগুলো মেনে চলুন
হৃৎপিণ্ড সুস্থ-সবল রাখতে প্রাত্যহিক এই নিয়মগুলো মেনে চলুন
গোটা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে চলে যে অঙ্গটি, সেটাই হলো হৃৎপিণ্ড। শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ অঙ্গের যত্ন না নিলেই সর্বনাশ। একটু সচেতন থাকলেই কিন্তু হৃৎপিণ্ড সুস্থ-সবল রাখা যায়।
১. শরীরের ওজন ঠিক রাখুন
প্রতি ১০ শতাংশ অতিরিক্ত ওজন হ্রাসে ৭.৬ শতাংশ ক্ষতিকর চর্বি ও ১৫ শতাংশ হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। প্রতি ১০ কেজি ওজন হ্রাসে ৫-২০ (মিলিমিটার মার্কারি) সিস্টোলিক রক্তচাপ হ্রাস পায়।
শরীরের ওজন ৬০ এর কম ও অত্যন্ত হালকা কাজ করেন এমন ব্যক্তি নিচের খাদ্য তালিকা অনুসরণ করতে পারেন। দৈনিক ক্যালরি চাহিদা ও কাঙ্ক্ষিত ওজন অনুযায়ী খাদ্যের পরিমাণ বাড়াতে পারেন-
হৃৎপিণ্ডের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার
চর্বি- ১৬১ গ্রাম
আমিষ- ৭২ গ্রাম
শর্করা- ২৫৭ গ্রাম
কোলেস্টরল- ৩০০ মি. গ্রামের নিচে (১৮১০ কিলোক্যালারি)
সকালের নাস্তা
শুকনো রুটি/পাউরুটি ৭৫গ্রাম/ছোট ৩টা (৬-৭ ইঞ্চি) ২১০ কিলোক্যালরি
ডিম (কুসুম ছাড়া) ছোট ১টা একদিন পরপর ২০ কিলোক্যালরি
সবজি ১ কাপ অথবা আধা কাপ কাপ ঘন ডাল ৩০ কিলোক্যালরি
চা ১ কাপ, দুধ (সামান্য চিনি) ৩০ কিলোক্যালরি
সকাল ১১টায় হালকা খাবার
মৌসুমি ফল বড় ১টা ১০০ কিলোক্যালরি
বিস্কুট ১-২টা ৩০ কিলোক্যালরি
চা ১ কাপ ৩০ কিলোক্যালরি
দুপুরের খাবার
ভাত ১০০ গ্রাম বা ২.৫ কাপ ৩৫০ কিলোক্যালরি
মাছ/মাংস ৬০ গ্রাম বা ছোট দুই টুকরা ৩০ কিলোক্যালরি
শাক-সবজি ১ কাপ ২০ কিলোক্যালরি
সালাদ (টমেটা, শশা, গাজর) আধা কাপ ৩০ কিলোক্যালরি
ডাল ২৮ গ্রাম বা ১ কাপ মাঝারী ঘন ৮০ কিলোক্যালরি
বিকেলের নাস্তা, ৫টায়
এগ নুডুলস ১ কাপ ২০০ কিলোক্যালরি
চা ১ কাপ, দুধ ছাড়া (কম চিনি) ৩০ কিলোক্যালরি
অল্প কিছু ফল ২০ কিলোক্যালরি
রাতের খাবার
ভাত অথবা রুটি ১০০ গ্রাম বা ২.৫ কাপ বা ৩-৪টা রুটি ৩৫০ কিলোক্যালরি
মাছ বা মুরগি অথবা ডাল ৬০ গ্রাম, ছোট দুই টুকরা বা ডাল ১ কাপ মাঝারি ঘন ৮০ কিলোক্যালরি
শাক-সবজি ১ কাপ ৩০ কিলোক্যালরি
দুধ (সর ছাড়া) ২৫০ মিলি বা বড় ১ কাপ ৮০ কিলোক্যালরি।
> এক জন সুস্থ মানুষের দৈনিক মোট খাদ্য শক্তির কমপক্ষে ৪৮ শতাংশ শর্করা জাতীয় খাবার থেকে গ্রহণ করা উচিত।
> দৈনিক মোট খাদ্য শক্তির ১০ শতাংশের বেশি চিনি থেকে গ্রহণ করা উচিত নয়।
> দৈনিক মোট খাদ্য শক্তির ৩০ শতাংশ চর্বি জাতীয় খাবার থেকে গ্রহণ করা উচিত।
> প্রতিদিন ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
> আঁশযুক্ত খাবার, রঙ্গিন তাজা ফল, সামুদ্রিক মাছ, দানাদার খাবারে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা হার্টের রক্ত নালিতে চর্বি জমতে দেয় না।
যেসব খাবার গ্রহণ করবেন
ছোট কাটাওয়ালা মাছ, মিষ্টি পানির তেল ছাড়া বড় মাছ (চিংড়ি ছাড়া), সামুদ্রিক মাছ, কচি মাংস (চামড়া ছাড়া)। ডিমের সাদা অংশ সপ্তাহে দুই থেকে তিনটি (কুসুমসহ ডিম কর্মজীবীদের জন্য)।
সব ধরনের মৌসুমি সতেজ বিভিন্ন রঙ্গিন ফল (খোসাসহ), জুসার দিয়ে সদ্য তৈরি ফলের রস।
টাটকা রঙ্গিন ও আকর্ষণীয় যে কোনো শাক ও সবজি (প্রচুর পুষ্টি ভিটামিন, মিনারেল এবং আঁশ আছে)
ননীবিহীন দুধ (সর ছাড়া), ইয়গার্ট (দই) ছানা।
সয়াবিন, সানফ্লাওয়ার, অলিভ ওয়েল, মার্জেরিন
আটা (ভূষিসহ) চাউল, ভূট্টা, যব, নুডলস, ডালসহ সব ধরনের দানাদার খাবার।
যেসব খাবার বর্জন করবেন
মাছের মগজ, গলদা চিংড়ি, বড় মাছের তেল ও ডিম, গরু, খাসি ও হাঁসের মাংস, কলিজা, হাড়ের ভেতরের মজ্জা।
ডিমের কুসুম ও কুসুম মিশিয়ে তৈরি খাবার কেক, পুডিং ইত্যাদি।
নারিকেল ফলের রস।
ঘি, বাটার বা ক্রিমে ভাজা শাক। নারিকেল দিয়ে রান্না করা খাবার।
ননী পূর্ণ দুধ, আইসক্রিম, চকলেট, ছানা, মাখন, ঘি।
নারিকেল তেল, সরিষার তেল, বাটার হইড্রোজেনেটেড মার্জেরিন।
২. নিয়মিত পরিমিত ব্যয়াম করুন
অ্যারোবিকস ব্যায়াম করুন
দ্রুত হাঁটা, জগিং (এক জায়গায় দৌড়ান), সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, বাগান করা, ইত্যাদি অ্যারোবিকস ব্যায়ামের অংশ। হার্টের জন্য আরোবিকস সব থেকে ভালো ব্যায়াম।
এছাড়া যে কোনো কর্মতৎপরতা যাতে হৃৎপিণ্ড; ফুসফুস দীর্ঘক্ষণ ধরে ব্যবহৃত হয় সেগুলো এই ব্যায়ামের মধ্যে পড়ে।
অ্যারোবিকসে ৬৩-৬৮ কেজি ওজনের একজন ব্যক্তির প্রতি ৩০ মিনিটে ২৪৬ ক্যালরি ব্যয় হয়। দৈনিক ৩০-৬০ মিনিট অ্যারোবিকসের অভ্যাস করুন।
৩. সঠিক জীবন-যাপন পদ্ধতি মেনে চলুন
> ধূমপান এখনই বর্জন করুন। প্রকাশ্যে ধূমপান একটি অসভ্যতা ও অভদ্রতার পরিচয় বহন করে ও অন্যের ক্ষতি করে। নিজেকে অভদ্র প্রমাণ করবেন না, অন্যের ক্ষতিকরার অধিকার আপনার নেই।
> সাদা পাতা, জর্দা, দোক্তা, গুল খাবেন না; মদ্যপান পরিহার করুন।
> আবেগ, উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা পরিহার করুন।
> হাসি-খুশি থাকুন, প্রার্থনা করুন, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা ও অন্যকে ঠকানোর বুদ্ধি বা চিন্তা পরিহার করার চেষ্টায় থাকুন।
> শিশু, বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটান।
> দুই বছরের অধিক জন্মনিরোক এবং করটিসন জাতীয় ওষুধ সেবন করবেন না।
> উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগের সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিন।
> মনোবিজ্ঞানীরা প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব সম্পন্ন, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, সদা সর্তক, বেশি কাজের চাপ ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে টাইপ ‘এ’ (ব্যক্তিত্ব) সম্পন্ন মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ বেশি হৃদরোগে ভোগেন। ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে ফেলুন, হৃদরোগ থেকে মুক্ত থাকুন।
ডা. টি আই খান ওয়াসিম
ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট
ময়মনসিংহ মেডিকেলে কলেজ হাসপাতাল
ইভেন্ট স্ট্রিম : হার্টের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে লেখাসমূহ
-
০৩ এপ্রিল, ২০২৪
-
২৩ নভেম্বর, ২০২১
-
২১ নভেম্বর, ২০২১
-
১৭ অক্টোবর, ২০২১
-
১৪ অক্টোবর, ২০২১
-
১৪ অক্টোবর, ২০২১