বাড়তি চিনি খাওয়া বন্ধ করুন, শরীর আর ত্বকের পরিবর্তন নিজেই টের পাবেন

বাড়তি চিনি খাওয়া বন্ধ করুন, শরীর আর ত্বকের পরিবর্তন নিজেই টের পাবেন

 চিনি
চিনিকে বলা হয় হোয়াইট পয়জন বা সাদা বিষ - ছবি: সংগৃহীত

চিনিকে বলা হয় সাইলেন্ট কিলার বা নীরব ঘাতক। আবার বলা হয়, হোয়াইট পয়জন বা সাদা বিষ। তবে কেবল তখনই, যখন তা মাত্রা ছাড়াবে। উচ্চ মাত্রার ফ্রুকট্রোজ–সমৃদ্ধ কর্ন সিরাপ বা বাড়তি চিনিযুক্ত জুস, কোল্ড ড্রিংস, চা বা কফি আপনি কখনোই খেতে পারবেন না, এমন নয়। মন চাইলে খাবেন, তবে শরীরের অবস্থা আর মাত্রা বুঝে।

কেন প্রয়োজন নেই বাড়তি চিনির ?

আমেরিকান হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশনের (এএইচএ) মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের শরীরে প্রতিদিন ১৫০ ক্যালরি বা ৩৬ গ্রাম চিনির প্রয়োজন, যা ৯ চা–চামচ চিনির সমান। একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর শরীরে প্রতিদিন ১০০ ক্যালরি বা ২৪ গ্রাম চিনির প্রয়োজন, যা ৬ চামচ চিনির সমান।

১. স্বাভাবিক খাবারেই যথেষ্ট চিনি আছে

মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমরা প্রতিদিন যে স্বাভাবিক খাবার খাই, তাতেই এই চিনির চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। বাড়তি চিনির খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না।

বাংলাদেশে আমের মৌসুমে আমের চেয়ে জনপ্রিয় ফল আর নেই। হেলথলাইন জানিয়েছে, একটা আমে থাকে ৪৬ গ্রাম চিনি বা ১৯১ ক্যালরি। আর এক প্লেট ভাতে থাকে ২০০ থেকে ৩০০ ক্যালরি। তাই বড় সাইজের একটা আম খেলে আপনার চিনি তো দূরের কথা, এক বেলা ভাত না খেলেও অসুবিধা নেই।

কলায় ১৪ গ্রাম চিনি থাকে। ফলে আপনি যদি দিনে দুটি কলা খান, তাহলেই আপনার আর বাড়তি চিনির বিশেষ দরকার নেই।

একটা আপেলে চিনি থাকে ১৯ গ্রাম। ফলে দ্বিতীয় আপেলটির দিকে হাত বাড়ানোর আগে একবার ভাবুন।

২. অস্বাস্থ্যকর

অতিরিক্ত চিনি খেলে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যায়। ওজন বেড়ে যায়। আর স্থূলতা হৃদ্‌রোগ, কয়েক ধরনের ক্যানসার, টাইপ টু ডায়াবেটিসের সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত চিনি উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই বাড়তি চিনি যত কম খাবেন, তত ভালো। একেবারে বাদ দিয়ে দেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।

চিনি কোনো স্বাস্থ্যকর খাবার নয়। বিশেষ করে সাদা চিনি মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর। পরিশোধিত সাদা চিনিতে হাইড্রোজ ব্যবহার করা হয়। ফলে ওপরের বাদামি রঙের আয়রন চলে যায়, পড়ে থাকে কেবল কার্বোহাইড্রেটম, যা খেলে মানুষ মোটা হয়। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়, পেটে চর্বি জমে।

গুড় ধাপে ধাপে ভেঙে রক্তের সঙ্গে মেশে। কিন্তু চিনি সরাসরি, দ্রুত রক্তে মেশে। আর মস্তিষ্কে পৌঁছায় এর প্রভাব। আর ঠিক এই কারণেই চকলেট খেলে মন ভালো হয়ে যায়।তবে তা সাময়িক হলেও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

চিনি হাই ফ্রুকট্রোজ তৈরি করে, তা স্বাদগ্রন্থিকে পুরোপুরি তৃপ্ত করায় চিনি বেশি খেয়ে খেললেও গ্রন্থি মস্তিষ্ককে জানাতে পারে না যে আর দরকার নেই। টক, ঝাল বা নোনতা স্বাদের ক্ষেত্রে কিন্তু এ রকম হয় না। তাই চিনি খাওয়া একধরনের নেশা।

দাঁত ভালো রাখতে বাড়তি চিনিকে বিদায় দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

৩. সৌন্দর্য
কেবল স্বাস্থ্যগত দিক থেকেই নয়, সৌন্দর্যের জন্যও চিনি ক্ষতিকর। আপনি এক মাস বাড়তি চিনি বন্ধ করে দিন, ত্বকের পরিবর্তন নিজেই বুঝতে পারবেন। কেবল ত্বক নয়, শরীরের পরিবর্তনও হবে চোখে পড়ার মতো। ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার হার বাড়িয়ে তোলে বাড়তি চিনি। এ ছাড়া চিনি স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করে, তাই ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। বাড়তি চিনি ছাড়ুন, ঘুমও ভালো হবে। আজেবাজে স্বপ্নও দেখবেন না।