সচেতনতায় ৮০ ভাগ ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব: অধ্যাপক ডা. নিজামুল হক

সচেতনতায় ৮০ ভাগ ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব: অধ্যাপক ডা. নিজামুল হক

ক্যান্সার
সচেতনতার সাথে জীবন-যাপনের সঠিক পদ্ধতি মেনে ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব (ইনসেটে অধ্যাপক ডা. নিজামুল হক) - ফাইল ছবি

সচেতনতার সাথে জীবন-যাপনের সঠিক পদ্ধতি মেনে ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নিজামুল হক। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে ডক্টর টিভিকে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ডা. নিজামুল হক জানান, ক্যান্সার মূলতঃ লাইফস্টাইলজনিত রোগ। সঠিক নিয়মে জীবনযাপনের মাধ্যমে ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই সবাইকে সঠিকভাবে জীবনযাপনের পরামর্শ দেন তিনি। 

ধূমপান ও নানাভাবে তামাক গ্রহণের ফলে মানুষ ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছে। ৭০ ভাগ ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ ধোঁয়া। অন্যদিকে তামাক পণ্য সিগারেট ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এরপর রয়েছে পান পাতা, জর্দা, সাদাপাতা, গুল, তামাক পাতা ইত্যাদি গ্রহণ করা।

তাছাড়াও মানুষের মধ্যে ফাস্টফুড খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে, ডুবো তেলে ভাজা ও পোড়া মাংস খাচ্ছে, বিভিন্ন ভাজাপোড়া বেশি পরিমাণে খাচ্ছে। খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল, ফরমালিন ইত্যাদি তো আছেই। হোটেল- রেস্টুরেন্টে খাবারের নিম্নমানও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের কারণ। এসব কারণে কিডনির সমস্যা হচ্ছে, লিভার ক্যান্সার হচ্ছে, ফুসফুসের ক্যান্সার হচ্ছে।

অন্যদিকে প্রযুক্তর প্রসার ও যান্ত্রিকতা বেড়ে যাওয়ায় মানুষের শারীরিক পরিশ্রম কমে গেছে। আগের মত অনেকেই হাঁটেন না, ব্যায়াম করেন না। শরীরের ইমিউনিটি কমে যাচ্ছে। যার কারণে শরীরে ক্যান্সার বাসা বাঁধছে।

পরিবেশ দূষণও ক্যান্সার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বায়ুদূষণ, কারখানার বর্জ্য তো আছেই। 

পুরুষের ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। নারীর ক্ষেত্রে জরায়ু ও ব্রেস্ট ক্যান্সার, কিন্তু নারী-পুরুষ মিলে যদি ধরি তাহলে মুখ বা গলার ক্যান্সারই মানুষের সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। এর প্রধান কারণ তামাক বা ধোঁয়া। পুরো হেডনেক ক্যান্সারটাকে আমরা ১৫ ভাগে আলাদা করে বিশ্লেষণ করি, কিন্তু যদি এটা না করে শুধু হেডনেক ক্যান্সারটাকে বিশ্লেষণ করি দেখা যাবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে হেডনেক ক্যান্সার। এর অন্যতম কারণ ধোঁয়া। আবার অনেকে মুখমণ্ডলের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে খুব একটা সচেতন না। এখনো অনেকে ঘুম থেকে উঠে ভালোভাবে ব্রাশ করে না। রাতে দাঁত পরিষ্কার করার নিয়ম কিন্তু সেটিও অনেকে করে না। নারীর জরায়ু ক্যান্সারও হচ্ছে অপরিচ্ছন্নতার কারণে। অনেকেই জানে না কীভাবে পিরিয়ডের সময় পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি অনেকেই সঠিকভাবে সেবন করে না, অনেকেই জানে না জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি কতদিন পরপর বদলাতে হয়, এর সঠিক নিয়মও জানে না। এটিও জরায়ু ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। আবার সূর্যের ‘আল্ট্রা ভায়োলেট রে’ ক্যান্সার তৈরি করে। অনেকেই রোদের মধ্যে মাঠে কাজ করে খালি গায়ে, অনেকে বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহার করে না। সরাসরি প্রখর রোদে থাকে। সমুদ্রের পাড়ে বালির মধ্যেও রেডিয়েশন পাওয়া যায়। এগুলো স্কিন ক্যান্সারের কারণ।

জেনেটিক কারণে মাত্র ৭ থেকে ১০ ভাগ ক্যান্সার হয়ে থাকে। বংশের কেউ ক্যান্সার আক্রান্ত হলে বাকী সদস্যদেরও ঝুঁকি থাকে। এ কারণে অন্য সবাইকে দ্রুত জেনেটিক স্ক্রিনিং করা দরকার। তাতে ছড়িয়ে পড়ার আগেই ক্যান্সার শনাক্ত হবে। তখন অল্প চিকিৎসাতেই ক্যান্সার নির্মূল হবে। তাতে খরচও হবে কম। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য একটি ক্যান্সার সেন্টার থাকতে হবে। লিনিয়াক মেশিন, ব্র্যাকি থেরাপি মেশিন, কেমোথেরাপি বিভাগ, সার্জারি বিভাগ থাকতে হবে। একদম ন্যূনতম যদি হয় তাহলে এগুলো থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনুপাতে ক্যান্সার সেন্টার থাকা প্রয়োজন দুই হাজার। কিন্তু বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩০টি সেন্টারও নেই। তবে আশার কথা হলো- সরকার এরই মধ্যে আটটি বিভাগীয় শহরে আটটি রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টার তৈরির কাজ শুরু করেছে। সেখানে ক্যান্সারের পাশাপাশি কিডনি ও হৃদরোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে চারটি অপারেশন সেন্টার থেকে আটটি করা হয়েছে। ৩০০ বেডের হাসপাতালটিকে ৫০০ বেডে রূপান্তর করা হয়েছে। এখন জনবল দরকার। সরকারেরও পরিকল্পনা আছে। আশা করছি শিঘ্রই জনবল পরিপূর্ণ করে দেবে। আমাদের এখানে ক্যান্সারের চিকিৎসা এবং বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার খরচ অনেক কম। যেখানে অন্য হাসপাতালে ১৫ হাজারে চিকিৎসা হচ্ছে, আমাদের এখানে ১ হাজার ১ হাজার ৫০০ টাকায় হয়ে যায়।