কিডনি স্বাস্থ্য নিয়ে আত্মঘাতী অবহেলা  

কিডনি স্বাস্থ্য নিয়ে আত্মঘাতী অবহেলা  

কিডনী
কিডনী স্বাস্থ্য নিয়ে আত্মঘাতী অবহেলা- বিষয়ে লিখেছেন ডাঃ মোঃ মাকসুদ উল্যাহ্‌  - সংগৃহীত

৯ মার্চ বৃহস্পতিবার, বিশ্ব কিডনী দিবস। প্রতি বছর মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার এই দিবসটি পালিত হয়।  

স্থায়ী কিডনি রোগ সম্পদশালী ব্যক্তিকে ফকির বানিয়ে মৃত্যুতে নিয়ে ছাড়ে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যক্তি নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে গাফেল থাকে। তারা কখনোই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে চায় না। ফলে গোপনে তিলে তিলে তুষের আগুনের মতো কিডনী ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এক সময় হঠাত করে রোগ ধরা পড়ে। কিন্তু ততদিনে যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন কিডনীকে রক্ষা করার চেষ্টা করে আর খুব একটা লাভ হবে না। এখন পথ খোলা আছে শুধু কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট করার অথবা সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিন ডায়ালাইসিস করে বেঁচে থাকার। কিন্তু নাই সামর্থ্য। 

তাই সময় থাকতেই বছরে একবার কিডনী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। এজন্য ভালো ল্যাবরেটরী থেকে সেরাম ক্রিয়েটিনিন, ইউরিন আরএমই, আরবিএস পরীক্ষা করা দরকার। বছরে একবার একজন এমবিবিএস ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে এমনটা করা যায়। সেই সাথে একজন এমবিবিএস ডাক্তার দ্বারা বছরে একবার রক্তচাপ মাপা দরকার। 

কিডনীর স্থায়ী ক্ষতির প্রধান কারণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস মেলাইটাস। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অবহেলার কারণে অনেকের কিডনীর ক্ষতি ত্বরান্বিত হয়। প্রায়ই দেখা যায়, ডাক্তার রোগীকে সকালে এবং সন্ধ্যায় ইনসুলিন নিতে বলেছেন। কিন্তু রোগী শুধু সকালের ইনসুলিন নেয়, সন্ধ্যারটা নেয় না। এক্ষেত্রে রোগী মনে করেন, ডাক্তারের চাইতে তিনি নিজে ডাক্তারি বেশি বুঝেন। ফলে ১২ ঘন্টা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, আর বাকি ১২ ঘন্টা থাকে অনিয়ন্ত্রিত। এভাবে দুই তিন বছর পার করে দেয়। এভাবেই মুলত রোগী নিজের ক্ষতি করে যা প্রতিরোধ করা ডাক্তারের দ্বারা সম্ভব হয় না।। পরে রোগী আফসোস করে। কিন্তু এখন আর আফসোস করে কী লাভ? নিজের ক্ষতিটাতো নিজেই করলেন নিজ হাতে।

আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ডাক্তার রোগীকে বাড়ীতে গ্লুকোমিটার দিয়ে নিয়মিত সকালে খালি পেটে এবং খাওয়ার দুই ঘন্টা পর ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে বলে। কিন্তু  রোগী শুধু খালি পেটের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করেই ক্ষান্ত থাকে এবং এতটুকুই যথেষ্ট মনে করে। এভাবে রোগী  মনে করে তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে। এদিকে ভরা পেটে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় মাসের পর মাস বা বছর চলতে থাকে। এভাবে তিলে তিলে  ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে কিডনী। 

অনেকের দেখা যায় বয়স ৩৫ বছর হয়ে গেছে কিন্তু তিনি এখনো নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেননি এবং করার দরকার বলেও মনে করেন না। অথচ ভিতরে ভিতরে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেশার) বা কিডনীর প্রদাহ (গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস) বা মাসের পর মাস অতিরিক্ত ব্যাথানাশক ওষুধ সেবনের ফলে তার কিডনী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে স্থায়ীভাবে!

লেখক : ডাঃ মোঃ মাকসুদ উল্যাহ্‌ 
কিডনী বিশেষজ্ঞ, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতা, কুমিল্লা।