চোখে চশমাজনিত সমস্যাগুলো কী কী?

চোখে চশমাজনিত সমস্যাগুলো কী কী?

জীবনকে আমরা যদি কয়েকভাগে ভাগ করি।  শৈশব, কৈশোর, যৌবন, পরিণতি ও বার্ধক্য।  কোনো মানুষের বয়স ৪০ পার হয়ে গেলে তখন তার শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়।  এর মধ্যে অনেকের চোখেও এর প্রভাব ফেলে।  অর্থাৎ, বয়স ৪০ পার হয়ে গেলে অনেকের চোখে সমস্যা তৈরি হয়, এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের যে সমস্যাটা বেশি তৈরি হয় তা হলো- কাছের জিনিস দেখতে সমস্যা। বিশেষ করে লেখা পড়তে।  যার জন্য চশমার দরকার হয়। এটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রেস বায়োপিয়া বলা হয়।  এটি চশমা দিয়ে ঠিক করা যায়।  

এ বিষয়ে গত ২৪ নভেম্বর ডক্টর টিভির বিশেষ আয়োজন চোখের চশমা ও ল্যাসিক’ এই বিষয়ে দৃষ্টি আই হসপিটাল নিবেদিত ‘দৃষ্টি আলাপন’ অনুষ্ঠানে আলোচনা কথা বলেছেন ঢাকার ভিশন আই হসপিটালের কনসালটেন্ট ও গ্লুকোমা স্পেশালিস্ট ডা.সিদ্দিকুর রহমান।  তিনি জানিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

ডক্টর টিভি: চোখে চশমাজনিত সমস্যাগুলো আসলে কী কী হয়ে থাকে?

ডা.সিদ্দিকুর রহমান: শৈশবে বা কৈশোরে যদি কারও চশমা লাগে।  যদি কারও দূরে দেখতে সমস্যা হয়।  তাহলে আমরা তার চোখ পরীক্ষা করে দেখি, কেন সমস্যা হচ্ছে। যদি চোখের ভেতরে অন্যকোন রোগ না থাকে। যেমন ছানি রোগ, রেটিনার রোগ বা অন্য কোন রোগ না থাকুক। শুধুমাত্র চোখের ভেতরে যে আলো ঢুকে, যা আমাদের রেটিনার ওপর পড়ে একটা প্রতিবিম্ব তৈরি করবে, এই প্রতিবিম্ব যদি সঠিকভাবে তৈরি না হয়- তাহলে আমরা দুইধরনের রোগের কথা বলতে পারি। একটার নাম হচ্ছে নাায়োপিয়া বা হ্রস্বদৃষ্টি। আরেকটা হচ্ছে হাইপারমেট্রোপিয়া বা দূরদৃষ্টি। এর পাশাপাশি আরেকটা সমস্যা আছে স্টেগোলিজম। এর তেমন বাংলা অর্থ নেই। তবে যারা চশমা ব্যবহার করেন, তারা বোঝেন। একটা পাওয়ার লাগে তার একটা একসেস দরকার হয়। কারও মাইনাস কারও প্লাস পাওয়ার লাগে।

এই পুরো জিনিসটাই হলো এরকম, চোখের ভেতরে আলোটি ঢোকার পড়ে ছোট বিম্ব প্রতিসরণ হয়ে রেটিনার ওপর প্রতিবিম্ব তৈরি করতে পারছে না। এই ক্ষতিটা দূর করার জন্য আমরা চশমা ব্যবহার করি।

চশমা বাচ্চাদেরকে আমরা ঠিক করে দেই। কিন্তু এটি ঠিক হয়ে যায় না আসলে। আমরা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে দেখার একটা অবলম্বন করে দেই। কিন্তু দেখা যায় যে বাচ্চা যখন বড় হয় তখন তার শারীরিক নানা পরিবর্তনের পাশপাশি তার পাওয়ারও পরিবর্তন হয়। মানে চোখের গঠনেরও পরিবর্তন হয়তো। সেকারণে পাওয়ারেরও পরিবর্তন হয়ে যায়। এটা আসলে কোন খাবার, মাছ মাংস, গাজর কিংবা অন্য কোন ভিটামিন খেয়ে ঠিক করা যায় না। এরজন্যই চশমাই দিতে হয় ঠিক মত করে। এভাবে বছর বছর পার হয়ে পাওয়ারের পরিবর্তন হতে পারে।

একটা পর্যায় গিয়ে একটা বাচ্চা যখন এডাল্ট হয়ে যায়, ১৮-১৯ বছর বয়স হয়, তখন তার উচ্চতা বৃদ্ধি হলে তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তার পাওয়ারটা আর বৃদ্ধি পায় না। তার মানে কারও যদি মাইনাস থ্রি বা ফোর লাগে, দেখা যায় এডাল্ট হওয়ার পরও ওটাই লাগছে। অনেকদিন পর্যন্ত পাওয়ারের কোন পরিবর্তন হয় না।  এরকম অবস্থা হলে আমরা একটা ব্যবস্থা নিতে পারি।

ডক্টর টিভি: চোখের ইউনিফোকাল, বাইফোকাল এবং প্রোগ্রেসিভ বিষয়গুলো কী? 

ডা. সিদ্দিকুর রহমান: ইউনি মানে ১ আর ফোকাস মানে পয়েন্ট। অর্থাৎ আলোটা ফোকাস করে একটা পয়েন্টে ফেলবে। আমরা যে চশমা ব্যবহার করছি- এটা লেন্স আসছে। একটা চশমার একটা কাঁচের মধ্যে যদি একটাই ফোকাস থাকে, সেটক ইউনিফোকাল বা মনোফোকাল। এটা সাধারণত লাগে যাদের দূরে দেখার জন্য সমস্যা হয়। বিশেষ করে তরুণ বয়সীদের জন্য দরকার হয়। মোটকথা দূরে দেখার জন্য যে চশমাটা সেটাকে ইউনিফোকাল বলা হয়ে থাকে।

কিন্তু কোনো মানুষের ৪০ বছর বয়সের এর পরে গিয়ে যে চশমাটা লাগছে, তখন দেখা যাচ্ছে দূরের জন্য চশমাটা লাগে সেটা বানানো লাগে।  যদি না লাগে তাহলে জিরো পাওয়ার থাকলো। আর লাগলে তো যে কোন একটা পাওয়ার লাগলো। তার জন্য একটা ফোকাস পয়েন্ট দরকার হয়।  রিডিংয়ের জন্য আরেকটা ফোকাস পয়েন্ট দরকার হয়।  দুটো চশমা ব্যবহার করলে তো ঝামেলা।  এজন্য একটি কাঁচের ভেতরে বা একটি লেন্সের ভেতরে দুইটা ফোকাস পয়েন্ট তৈরি করে দেয়া হয়। আর এটাই হচ্ছে বাইফোকাল।  বাই মানে দুই।  বাইসাইকেল মানে যেমন দুই চাকার সাইকেল।  বাইফোকালের ভেতরে হলো অনেকগুলো প্যাকেজ (লেন্স) আছে।  সেটা হলো খুব স্পষ্টভাবে দুই দুটি মাত্র পয়েন্ট দেয়া থাকে, মাঝখানে যদি ভাগ করা থাকে লাইনটা, বা একটা গোল দাগ দিয়ে যদি ভাগ করা থাকে।  আমাদের বয়স্ক মানুষেরা এরকম চশমা পড়ে থাকে।  এটাকে আমরা বাইফোকাল চশমা বলি।

এটার সুবিধা হলো এটার দাম কম হয় এবং ব্যবহারকারীও খুব সহজে এটা ব্যবহার করতে পারে। বিশেষ করে যারা টেবিল চেয়ারে বসে কাজ করে, তাদের জন্য বাইফোকাল চশমাটা বেশ সহায়ক।

এরপর যেটা, মডার্ন সেন্সের সেটা হলো প্রোগ্রেসিভ চশমা।  প্রোগ্রেসিভ লেন্সটা হলো যেটা আমি এখন পড়ে আছি। এটাতে দুটো পয়েন্ট ঠিক না। একদম দূরে দেখার জন্য একটা পয়েন্ট আছে। সেখান থেকে আস্তে আস্তে পাওয়াটাকে নিচের দিকে পাওয়ারটাকে বাড়ানো হয়েছে। এটা বাড়তে বাড়তে একদম নিচে গিয়ে শেষ হয়। তারমানে আমি যদি হাতের কাছে একটি বই নিয়ে পড়ি সেটাও যেমন দেখতে পাবো তেমনি এই যে আমি ল্যাপটপটা দূরে রেখেছি সেটাও দেখতে পাবো। একইসঙ্গে আবার ঠিক জায়গায় ফোকাস ধরতে পারবো। বা আমি ডানদিকে বা বামদিকে কোন একটা ডকুমেন্টস দেখছি বা কম্পিউটারে কাজ করছি। অর্থাৎ মাল্টিপল কাজ যাদের করতে হয়, একই সঙ্গে মাল্টি ভ্যারাইটিজ ফোকাস দরকার হয়। যারা শুধু লেখাপড়া করে, কম্পিউটার চালাই তারা নয় কিন্তু। এমনকি যারা দর্জি কাজ করেন কিংবা যেসব প্রকৌশলীরা বড় সিটের ওপর ড্রয়িং করেন- মানে অনেক এরিয়া একসঙ্গে দেখতে হয়, তাদের জন্য প্রোগ্রেসিভ লেন্সটা হলো বেস্ট লেন্স।

অনুলিখন: ইশরাত জাহান মুর্শিদা

রিলেটেড সংবাদ