ডায়াবেটিস নিয়ে যা জানা খুবই জরুরি

ডায়াবেটিস নিয়ে যা জানা খুবই জরুরি

চিকিৎসক
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৬ নারীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন - ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করার জন্যই প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালন করা হয়।

বর্তমানে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫৪ কোটি। ডায়াবেটিস যেহেতু বহুলাংশেই (৭০ শতাংশ পর্যন্ত) প্রতিরোধযোগ্য। ফলে এখনই যদি এ রোগের প্রতিরোধ না করা হয়, তাহলে এই সংখ্যা ২০৪৫ সাল নাগাদ প্রায় ৭৮ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়, যাদের প্রায় অর্ধেকই নারী। তাছাড়া ডায়াবেটিস আছে, এমন অর্ধেকের বেশি মানুষ জানেই না যে তাদের রোগটি আছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৬ নারীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, যাদের ৬৫ শতাংশই পরবর্তীতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের ও গর্ভস্থ শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে, তাদের পরবর্তীতে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি আরও বেশি।

এ অবস্থায় পরিকল্পিত গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের এটি নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে সচেতন করা এবং যাদের এখনো ডায়াবেটিস হয়নি তাদেরও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতন করে তোলাই এ দিবসের প্রধান উদ্দেশ্য।

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য- ‘আগামীতে নিজেকে সুরক্ষায় ডায়াবেটিসকে জানুন’। ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। একবার হলে তা কখানো সারে না। কিন্তু এটি প্রতিরোধযোগ্য ও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণযোগ্য। ডায়াবেটিস সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারলে একে ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এজন্য যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং যাদের ডায়াবেটিস নেই উভয়কেই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো জানতে হবে এবং নিজেকে সুরক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার খেলে, শারীরিক পরিশ্রম না করলে, নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে, স্বাভাবিকের চাইতে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস হতে পারে।

কাজেই যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা যদি এই বিষয়গুলো জানতে পারেন, তাহলে তারা সচেতন হয়ে নিজেদের সুরক্ষা করতে পারবেন। অন্যদিকে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদেরও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিওর, অন্ধত্ব এবং নিম্নঅঙ্গ বিচ্ছেদের মতো মারাত্মক ও প্রাণঘাতী ঝুঁকি থাকে। কাজেই তারা যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো জানতে পারেন যেমন নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুষম খাদ্য খাওয়া, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ করা, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করা তাহলে তারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিসজনিত এসব জটিলতা থেকে নিজেকে সুরক্ষা করতে পারবেন।

সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিস মহামারী আকার ধারণ করেছে। ডায়াবেটিস একটি মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী রোগ, যা ব্যক্তি এবং তাদের পরিবার, সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাস ডায়াবেটিসের বৈশ্বিক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়, ২০২১ সালে ৫৩ দশমিক ৭ কোটি মানুষ (প্রতি ১০ জনে ১ জন) ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। ২০৩০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬৪ দশমকি ৩ এবং ২০৪৫ সালে ৭৮ দশমিক ৩ কোটিতে পৌঁছাতে পারে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ২৪ কোটি মানুষ (প্রতি ২ জনে ১ জন) জানে না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত চারজনের মধ্যে তিনজনের বেশি লোক নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে বাস করেন।

প্রায় ২ কোটি নারী (প্রতি ৬ জনে ১ জন) গর্ভাবস্থার হাইপারগ্লাইসেমিয়ায় (উচ্চ রক্তের গ্লুকোজ) আক্রান্ত হয়। ২০২১ সালে বিশ্বে ডায়াবেটিসের কারণে ৬৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর রোগটির পেছনে ব্যয় হয়েছে ৯৬৬ বিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্যখাতে মোট ব্যয়ের ৮ শতাংশ।

[বিশ্ব ডায়াবেটিক দিবস উপলক্ষে রোববার বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্য]