কী করলে রোজা কিডনি রোগীর জন্যও সহজ

কী করলে রোজা কিডনি রোগীর জন্যও সহজ

কিডনি রোগীর রোজা
অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ - ছবি: সংগৃহীত

কিডনি রোগী সবার জন্য রোজা রাখা সমস্যা না। যারা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছেন, তাদের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস মূল সমস্যা। এ জন্য এ ধরনের রোগী রোজা রাখতে চাইলে চিকিৎসকের মাধ্যমে আগে থেকে কোন ওষুধ খেতে হবে, তা ঠিক করে নিতে হবে। কারণ রোজায় দীর্ঘ ১৪-১৫ ঘণ্টা কোনো ওষুধ খাওয়ার সুযোগ থাকে না।

কিডনি রোগের তিন-চার নম্বর ধাপে যারা আছেন, তারা রোজা রাখতে পারেন। এ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা হয়েছে। তবে যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, রোজা রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই এটি আগেভাগে বশে আনতে হবে।

কিডনি রোগীদের জন্য ঝুঁকি বিবেচ্য হয়, আপনি কোন অঞ্চলে বসবাস করেন এবং কত সময় আপনাকে রোজার জন্য না খেয়ে থাকতে হচ্ছে, তার ওপর। যেমন মধ্যপ্রাচ্যে রোজার ক্ষেত্রে শরীরে প্রচুর ঘাম হয়। পানি স্বল্পতা দেখা দেয়। এ জন্য যাদের কিডনি রোগ আছে, তাদের পানি স্বল্পতা দেখা দিতে পারে।

তিন এর বি এবং চার ও পাঁচ নম্বর ধাপের রোগীরা রোজা রাখতে চাইলে রোদে চলাফেরা এবং মাঠেঘাটে কাজের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। তিন ও চার নম্বর ধাপে থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যের মতো জায়গায় ইনডারে কাজ করলে, রোজা রাখতে তেমন ঝুঁকি হবে না।

আমাদের দেশেও রোজায় প্রায় ১৪-১৫ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয় এবং সময়টা গরম। এ জন্য যারা তিন, চার ও পাঁচ নম্বর ধাপে আছেন, তাদের জন্য রোজায় বেশ ঝুঁকি আছে। যারা ডায়ালাইসিসের রোগী, তাদের জন্য ঝুঁকিটা আরও বেশি। ডায়ালাইসিসের দিন রোজা রাখতে পারবেন না।

অন্য দিনগুলোতে রোজা রাখতে চাইলে, একবারে বেশি পরিমাণে পানি পান করতে পারবেন না। অল্প অল্প পরিমাণে পানি পান করতে হবে। আর যারা সিএপিডি করছেন, তাদের প্রতি আট ঘণ্টা পরপর ১ লিটার পানি পান করতে হয়। কাজেই তাদের জন্য রোজা রাখা ঠিক হবে না।

যারা কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন, তারা চাইলে রোজা রাখতে পারেন। তবে প্রতিস্থাপনের জন্য যেসব ওষুধ দেওয়া আছে, সেগুলো সেহরি ও ইফতারের সময় নিয়ম করে খেয়ে নিতে হবে। কোনো ধরনের ব্যতয় হলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এ ছাড়া যাদের বারবার ইনফেকশন হয় বা আগেই ইনফেকশন রয়েছে, তাদের রোজা রাখা ঠিক হবে না। তবে চিকিৎসায় ইনফেকশন দূর করে রোজা রাখতে কোনো সমস্যা নেই।

যাদের কিডনিতে পাথর হয় এবং তা বারবার হয়, তাদের জন্য রোজা রাখায় ঝুঁকি আছে। পাথর এড়াতে প্রচুর পানি পান করতে হয়। এ ধরনের রোগীরা রোজা রাখতে চাইলে সেহরি এবং ইফতারের পরে পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করতে হবে। কমপক্ষে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে।

যারা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছেন, সেহরির সময় তাদের পটাশিয়াম ও ফসফরাস বেশি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। মাছ-মাংস কম খেতে হবে। শরীর ও পায়ে পানি জমে থাকলে সেহরির সময় একবারে বেশি পানি পান করা যাবে না। এতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। একইভারে ইফতারের পরে একসঙ্গে বেশি পানি পান করা যাবে না। অল্প অল্প করে বারবার পান করতে হবে।

সেহরিতে চিকিৎসক যতটুকু ভাত কিংবা রুটি খেতে পরামর্শ দেন, তার বেশি খাওয়া যাবে না। যাদের শরীরে পটাশিয়াম বেশি আছে, তারা শাকসবজি খাওয়ার আগে পটাশিয়ামমুক্ত করে নিতে হবে।

ইফতারের সময় সবচেয়ে ভালো হবে একটি-দুটি খেজুর, সঙ্গে দই-চিড়া-মুড়ি খাওয়া। ভাজা-পোড়া, রঙের তৈরি খাবারগুলো কোনোভাবেই খাওয়া ঠিক হবে না। ঘরে চাল ও আটা দিয়ে তৈরি খাবার খাবেন। আপেল, পেয়ারা, আনারসের মতো কম পটাশিয়ামসমৃদ্ধ ফল খাওয়া যেতে পারে।

পরিমিত খাবার গ্রহণ করলে তিন, চার ও পাঁচ নম্বর কিডনি রোগের ধাপে থাকলেও রোজা রাখা যাবে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক: অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ
বিভাগীয় প্রধান, কিডনি রোগ বিভাগ
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল