চিকিৎসা করা কি ফৌজদারি অপরাধ?

চিকিৎসা করা কি ফৌজদারি অপরাধ?

চিকিৎসক
সার্জারি কক্ষে চিকিৎসক (ইনসেটে অধ্যাপক ডা. নোমান খালিদ চৌধুরী) - সংগৃহীত

বাংলাদেশে এখন কোনো কোন ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের চিকিৎসা ব্যার্থতায় ফৌজদারি অপরাধী মনে করা হচ্ছে।

সত্যিই কি তাই??

ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসার ক্ষেত্রে মতামত বা চিকিৎসা দিতে যদি ভুল হয় বা কথিত অবহেলা হয় তবে যেকোন সময়- 
ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের হেফাজতে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের নেয়া হচ্ছে, পুলিশ গ্রেফতার করছে বা চিকিৎসক পুলিশের গ্রেফতার এড়ানোর জন্য পলাতক হচ্ছেন।

চিকিৎসকরা সবসময় রোগীর জন্ম মৃত্যুর সীমারেখায় দাঁড়িয়েই সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। তদুপরি এখানে উন্নত , অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা অনেকাংশে অপ্রতুল।

গত কয়েক দশকে দেশের আনাচে কানাচে অনেক মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। এই সব মেডিক্যাল কলেজগুলোর মধ্যে অনেক মেডিক্যাল কলেজ চলছে অপ্রতুল চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থায়, শিক্ষক ও শিক্ষা সামগ্রীর অবস্থা সবাই-ই কম বেশি অবগত আছেন। এই সব মেডিক্যাল কলেজ এবং অনেক মানহীন মেডিক্যাল শিক্ষা এখন মেডিক্যাল পেশার গাঢ়ে..... এ সম্পর্কে যত কম বলা যায়, ততই সবার সম্মান রক্ষা হয়...

আবার এটাও আমরা ভুলে যাই বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল একটি দেশ। সাধ ও সাধ্যের টানাটানিতে বিপর্যস্ত আমাদের মেডিক্যাল ব্যবস্থাপনা। এটি বিবেচনায় না নিয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্ব যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি দেশের মত চাহিদা আমাদের সবার, তুলনা সব সময়।

বাংলাদেশের জনগনের শিক্ষা,অর্থনীতি,রাজনীতি, ব্যবসা, আমাদের আমলা,বিচার, প্রকৌশল কিংবা সামরিক সামার্থ কি এদের মত?????????

তা হলে শুধু চিকিৎসা কিভাবে উন্নত বিশ্বের মত হবে?এবং তা কিভাবে কামনা করি?
নিম্ন আদালতে দেয়া কোন রায় উচ্চ আদালতে পরিবর্তিত হলে নিম্ন আদালতকে সেই জন্য অভিযুক্ত করা যায় বা করা হয়? প্রশাসনের কোন জুনিয়র কর্মকর্তা কতৃক দেয়া সিদ্ধান্ত উর্ধতন কর্মকর্তার বিবেচনায় ভুল প্রতিপন্ন হলে সেই সিদ্ধান্ত উর্ধতন কর্মকর্তা সংশোধন করে দেন কিন্তু এই জন্য সংশ্লিষ্ট জুনিয়র কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না। একান্ত প্রয়োজন হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

তাহলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিএমডিসি থাকা সত্ত্বেও পুলিশি ব্যবস্থা বা ফৌজদারি ব্যবস্থা কেন হবে? কোন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটা দেখার দায়িত্ব তো চিকিৎসকদের রেগুলেটরি বডি বিএমডিসির।আমার ধারণা কি ভুল?

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ করে সার্জারীতে অনেক কম্পলিকেশন হয়, কম বেশী উন্নত অনুন্নত সকল দেশেই হয়। উদাহরণ : প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ এর অপারেশন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছিল এবং অপারেশন জটিলতায় তিনি মারা যান- সেই জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এর বিরুদ্ধে কি ফৌজদারি অভিযোগ দেয়া বা আনা হয়েছিল? এই ভাবে কি আদৈ চিন্তা করা যায়?

চিকিৎসকের মতামতকে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসা গণ্য করে বিচারের মুখোমুখি করা আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভয়াবহ অবস্থা ডেকে আনবে। পুরা চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেংগে পড়বে।

বহুল আলোচিত মেডিক্যাল ট্যুরিজম এর পোয়াবারো হবে.....এই মুহুর্তে এর বেশী কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না......আমাদের সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
আল্লাহ আমাদের সহায় হউন।

জয় বাংলা।

লেখকঃ

অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, নিউরো সার্জারি বিভাগ,
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। 

(বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখাটা স্যারের ফেসবুক টাইম লাইন থেকে নেয়া)