অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা

অতিরিক্ত চাপে শিশুরা পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে

অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা

অতিরিক্ত চাপে শিশুরা পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে

মানসিক চাপ
শিশুকে পড়াশোনায় অতিরিক্ত চাপ দেবার পরিণাম - সংগৃহীত

শিশুকে পড়াশোনায় অতিরিক্ত চাপ দেবার ফল বেশিরভাগ সময় ভাল হয় না। এতে অনেকে পড়ালেখার প্রতি ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলে। পড়তে চায় না। অনেক সময় রেজাল্ট খারাপ করে, এমনকি পড়ালেখাও ছেড়ে দেয়। নিজ ফেসবুক টাইম লাইনে ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা। 

তিনি বলেন, শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও বয়স বাড়ার সাথে সাথে পড়ালেখাটা অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য তাকে স্কুলে যেতে হয়। বাড়িতে পড়তে হয়, নিজে নিজে পড়তে হয়, বাবা-মা হেল্প করেন। কখনো কখনো তাকে অতিরিক্ত শিক্ষক রেখে তাকে পড়ানো হয়। এক কথায়, সামগ্রিকভাবে শিশুটিকে পড়ালেখা যে তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সেটা তাকে নির্দিষ্ট সময়ে এবং নিয়মিতভাবে করতে হবে- এই নির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যদিয়ে নিয়ে যেতে হয়। 

মাঝে মাঝে বিষয়টা এমনও হয় যে, শিশুটি সারাদিনে পড়ালেখা ছাড়া আর কোন কিছু করার সুযোগ পায় না। খেলাধূলা ও বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। জীবনকে উপভোগ করার কোন সুযোগ থাকে না তার।

অনেক সময় বাবা-মায়েরা বাচ্চাকে পড়ালেখার জন্য মাত্রাতিরিক্ত চাপাচাপি করেন। এমনকি বাচ্চাটা মানসিকভাবে কতটা সামর্থ্যবান, তার আইকিউ কতটুকু আছে- সেটাও তারা গ্রাহ্য করেন না। 

অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা আরও বলেন, একটা জিনিস হয়ে থাকে, হয়তো মা-বাবার পছন্দ, তার ছেলে ডাক্তার হবে। কিন্তু ছেলের হয়তো অন্য পেশায় যাবার পছন্দ রয়েছে। এই ধরনের চাপাচাপির ঘটনা কিন্তু অনেকের বেলায় হয়। পড়ালেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব একটা চয়েস আছে, তার স্বাধীন পছন্দ আছে- সেটা অনেক সময়ই আমরা এড়িয়ে (ইগনোর)  করে থাকি। যার ফলশ্রুতিতে অনেক বাচ্চা পড়ালেখার প্রতি ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলে। অনেক সময় পড়তে চায় না। অনেক সময় রেজাল্ট খারাপ করে। অনেক সময় পড়ালেখা ছেড়ে দেয়।

পিতা-মাতাদের উদ্দেশ্যে দেশের অন্যতম সেরা শিশু বিশেষজ্ঞ বলেন, বাবা-মায়েদের দায়িত্ব হলো, পড়ালেখার প্রতি সন্তানের আগ্রহ সৃষ্টি করা। জীবনে চলার জন্য মূল ভিত্তি বা বেজ লাইন তৈরি করে দেয়া, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথটা দেখিয়ে দেয়া। সে কতটুকু পড়বে, কি পড়বে, কি পড়বে না- পিতা-মাতারা সেটার গাইড লাইন দিতে পারেন। কিন্তু সেখানে তাকে চাপাচাপি করাটা ঠিক হবে না। 

তিনি আরও বলেন, বইয়ের ভেতরে যে কত জ্ঞান আছে, সেটা জানানোর জন্য শিশুদের সাথে বড়দেরও পড়ালেখা করা দরকার। বইয়ের ভেতরে কি আছে, সে বিষয়ে গল্প করা দরকার। 

পাঠ্যবইয়ের বাইরে তার আরও যেসব বিষয় জানা দরকার, সেটার জবাব অনেকে শিশু দিতে পারে না। সে কোথায় থাকে, বাবার নাম, চাচার নাম, গ্রামের বাড়ি- এ সব প্রশ্ন করলেও সে জবাব দিতে পারে না। তাই, বাচ্চাকে শুধু বইয়ের ভেতরের কিছু শেখালেই হবে না। সামাজিকভাবে বেঁচে থাকতে আরও যেসব কিছু দরকার আছে- সেসবও শেখাতে হবে।

শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, মোদ্দা কথা হলো, সন্তানকে পড়ালেখায় উৎসাহী ও মনোযোগী করতে যেসব বিষয় জরুরি, সেসব বিষয়কে ঠান্ডা মাথায় সন্তানের উপর প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে আমাদের শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটবে। যেসব বিষয়ে তাদের আগ্রহ আছে- তা জানতে পারবে এবং আকর্ষনীয়ভাবে নিজের জীবনকে গড়তে পারবে।