দেশে মিললো বিরল রোগ ‘এমআইএস-সি’

দেশে মিললো বিরল রোগ ‘এমআইএস-সি’

ফখরুল ইসলাম, ডক্টর টিভি
বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু রাব্বি - ফখরুল ইসলাম, ডক্টর টিভি

তীব্র জ্বর নিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬ বছরের শিশু রাব্বি। পরিক্ষা নিরীক্ষার পর অবশেষে জানা গেলো বিরল রোগে আক্রান্ত সে। যথা সময়ে সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায়, মৃত্যুর দুয়ার থেকে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পায় কোমলমতি এই শিশুটি।
ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভতি হওয়া শিশুটির মা ডক্টর টিভিকে বলেন, ‘আমার ছেলের শারিরীক অবস্থা আস্তে আস্তে খারাপের দিকে যেতে থাকে। যখন আইসিইউ’তে নেয় তখন অবস্থা আরো খারাপ ছিলো। ওই অবস্থায় আমার ছেলে আবার জীবন ফিরে পাবে এটা কখনই ভাবিনি। চিকিৎসকেরা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর দেখা গেলো আমার ছেলের হিমোগ্লোবিন কমে গেছে, রক্তে প্লেট কমে গেছে।’

ঢাকা শিশু হাসপাতালে একই রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেয়া রোগীর স্বজন জানান, ‘প্রথমে প্রচন্ড জ্বর শুরু হয়, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব সহ অসম্ভব পরিমাণে গায়ে ব্যথা শুরু হয়।’

চিকিৎসকরা জানান, বিরল এই রোগটির নাম মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন। যার সংক্ষিপ্ত রূপ এমআইএস–সি। জ্বরের পাশাপাশি প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়, লাল ফুসকুড়ি, পেটে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, ঠোঁট লাল হওয়া সহ অস্বাভাবিক দুর্বলতা।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের প্যাডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক শিরীন আফরোজ বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এক শিশু জ্বর শুরু হওয়ার ৫ দিন পর ১০৩ ডিগ্রী তাপমাত্রা থাকা অবস্থায় তার স্বজনেরা ভর্তি করান। আমরা দেখলাম শিশুটির পেট ব্যথা ছিলো এবং পেট ফুলেও গিয়েছিলো, লিভার একটু বড় ছিলো ও প্রস্রাব কমে গিয়েছিলো, কিডনিতেও সমস্য দেখা দেয়। এ অবস্থায় আমরা তাকে দ্রুতই কিডনি আইসিইউ’তে ভর্তি করাই। এরপর আন্তর্জাতিক গাইড লাইন অনুযায়ী তার চিকিৎসা শুরু করি। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা মধ্যেই শিশুটির অবস্থা ভালোর দিকে যেতে শুরু করে। এভাবে ৭ দিন ক্রিটিক্যাল কেয়ার নেফ্রোলজি অ্যান্ড ডায়ালাইসিস আইসিইউ‘তে চিকিৎসার পর কেবিনে হস্তান্তর করি।’

নতুন এই রোগটি করোনাভাইরাসের সাথে মিল থাকলেও এটি অন্যকে সংক্রমিত করে কিনা এখনো নিশ্চিত নয় চিকিৎসকেরা।

ডা. শিরীন আফরোজ বলেন, ‘মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন রোগটি অন্যকে সংক্রমিত করছে কিনা সেটি কেউ নিশ্চিত নয়। তবে এটি নিয়ে এখনও গবেষণা চালাচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।’

শিশু হাসপাতালের শিশু কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজওয়ানা রিমা ডক্টর টিভিকে বলেন, ‘যেহেতু আমরা এখানে কোভিডের অ্যান্টিবডিটা দেখতে পারিনা, সে জন্যই বলা যাচ্ছেনা। তবে বেশির ভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।’

বিরল এই রোগে দেশে এখন পর্যন্ত ৩৫/৪০ জন শনাক্ত হওয়ায় মৃত্যু হার কম। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত হবার ৭২ ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা না গেলে অনেককেই বাচানো সম্ভব নাও হতে পারে। 

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শফি আহমেদ বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এখন পর্যন্ত এই বিরল রোগে ৮ থেকে ১০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে ২ টি শিশু এখনও ভর্তি রয়েছে। এই শিশুগুলোকে যদি প্রাথমিক অবস্থায় ইনিশিয়াল ডায়াগনিসিস’টা করা যায় এবং শিশুদের সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে ভালো হয়ে যাবে। যেহেতু ওদের আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়, ওদের সঠিক চিকিৎসা দিতে না পারলে, মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়।’ 

চিকিৎসকেরা চলতি বছরের এপ্রিলে বিশ্বে প্রথম এই রোগটি শনাক্ত করেন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে। আর ১৫ মে বাংলাদেশে প্রথম এমআইএস–সি শনাক্ত হয় একটি বেসরকারী হাসপাতাল।