হার্ড ইমিউনিটির ধারণা এল যেভাবে

হার্ড ইমিউনিটির ধারণা এল যেভাবে

প্রতীকী ছবি।

মহামারী করোনাভাইরাসের এই সময়ে একটি কথা বেশ শুনা যাচ্ছে। তাহলো- 'হার্ড ইমিউনিটি', অনেকে এই শব্দ দুটির সঠিক অর্থ নির্ণয় করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আসলে এই শব্দ দুটির বাংলা কি হবে সেটা জানারও আগ্রহ অনেকের রয়ে গেছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ইংরেজি হার্ড (Herd) শব্দটি এসেছে ভেড়ার পাল থেকে। আর ইমিউনিটি (Immunity)হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

তিনি বলেন, ভেড়ার পালকে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে টিকা দেয়া হতো। একশ'টি ভেড়ার মধ্যে যদি ৮০টিকে টিকা দেয়া হতো তাহলে সংক্রমণ আর ওই ভেড়ার পালে বাড়তো না। আবার অন্য একশ'টির প্রত্যেকটিকে টিকা দেয়া হয়নি, তারপরও তাদের মধ্যে এক ধরণের সুরক্ষা বলয় কাজ করতো। এটাই হচ্ছে হার্ড ইমিউনিটি।

মানুষের ক্ষেত্রে বলা যায়, যখন একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে যদি নির্দিষ্ট অনুপাতে ভ্যাকসিন বা টিকা দেয়া যায়, তাহলে ওই কমিউনিটিতে আর সংক্রমণ হয়না। একে বলে হার্ড ইমিউনিটি।

এবিষয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিন নলেজ প্রজেক্টের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে- যখন একটি এলাকার অধিকাংশ মানুষকে কোন একটি সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক দেয়া হয় তখন ওই এলাকায় ওই রোগটির ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে না। কারণ ওই এলাকায় আর সংক্রমিত হওয়ার মতো মানুষই থাকে না।

উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, একটি সম্প্রদায়ের কারো মধ্যে যদি হাম দেখা দেয়, আর বেশিরভাগ মানুষের যদি টিকা দেয়া থাকে তাহলে ওই রোগটি আর কারো মধ্যে ছড়াতে পারে না। এটাই হার্ড ইমিউনিটি বা কমিউনিটি ইমিউনিটি। এর কারণে নবজাতক শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং অসুস্থ মানুষ যাদেরকে টিকা দেয়া সম্ভব নয় তারা রোগমুক্ত থাকেন।

করোনাভাইরাসের হার্ড ইমিউনিটি-

এখনো পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কোন টিকা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি নিয়ে বাজারে আসেনি। তাহলে এই সময় হার্ড ইমিউনিটি কিভাবে কাজ করবে তা নিয়ে বলা হচ্ছে, যারা ভাইরাসটিতে একবার আক্রান্ত হয়, তাদের মধ্য থেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়।

আর যখন বেশি মানুষ কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তখন বড় সংখ্যক মানুষের মধ্যে ভাইরাসের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। যার কারণে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি সুরক্ষা বলয় তৈরি হয় এবং ওই রোগটির সংক্রমণ থেমে যায়।

বে-নজির আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে হার্ড ইমিউনিটি কাজ করাটা কঠিন। কারণ, তিনি মনে করেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে হলে ৯০ ভাগের বেশি সংখ্যক মানুষ এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হতে হবে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এটা এখনো স্বীকৃত কোন পদ্ধতি নয়। তবে অনেকে মনে করেন যে এটা একটা উপায় হতে পারে। করোনাভাইরাসে হার্ড ইমিউনিটি হতে হলে অন্তত ৯০ভাগ মানুষ সংক্রমিত হতে হবে। অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে ৯ জন আক্রান্ত হতে হবে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হার্ড ইমিউনিটি হতে হলে যদি এখানে ১৭ কোটি মানুষ থাকে তাহলে প্রায় ১৬ কোটি মানুষকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে হবে।