নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে কয়েকটি চাওয়া

নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে কয়েকটি চাওয়া

স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন (ইনসেটে ডা. মো. কবির হোসেন) - ফাইল ছবি

নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন স্যারের কাছে কয়েকটি চাওয়া।

১. সরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আনসার/ হেলথ পুলিশ মোতায়েন করা।

২. খুচরা সরকারি হাসপাতাল ( ১০ বেড, ২০ বেড, ৩০ বেড) তৈরি না করা। বর্তমানে সরকারী হাসপাতাল যেন কমপক্ষে ১০০ বেডের হয়। সরকারি হাসপাতালে কোনো রোগীকে যাতে ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা নিতে না হয়। বেডের বাইরে রোগী ভর্তি বন্ধ করার জন্য নোটিশ জারি করা।

৩. জেলা/ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে চিকিৎসার প্রাণকেন্দ্র বানানো। এসব হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি দেওয়া। সকল সাবজেক্টর পোস্ট তৈরি করে পদায়ন করা। জেলা/ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে কোনো রোগীকে যাতে শুনতে না হয় যে, এই পরীক্ষা এখানে হয় না/ এই বিষয়ের ডাক্তার এখানে নাই, ঢাকা যান।

৪. ফ্রি চিকিৎসার পরিবর্তে যৌক্তিকহারে মূল্য নির্ধারণ করা। সম্ভব হলে হেলথ ইন্সুইরেন্সর  ব্যবস্থা করা।

৫. সহায়ক স্টাফের নিয়োগ প্রদান। যেমন ৪র্থ, তৃতীয়, দ্বিতীয় শ্রেনীর স্টাফ নিয়োগ করা।

৬. সরকারি হাসপাতালের বহিঃবিভাগে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ সীমিত করা। যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কার্ডিয়াক ডিজিজ, টিবি, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইচআইভি, স্ট্রোক, কোলেস্টেরলের জন্য ওষুধ, COPD, asthma এর জন্য ইনহেলার ইত্যাদি সাপ্লাই দেওয়া। গণহারে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, আয়রন, গ্যাসের ওষুধ, এন্টিহিস্টামিন, মন্টিলিওকাস্ট, এন্টিবায়োটিক, ব্যথার ওষুধ, নাপা, সর্দি-কাশির ওষুধ সাপ্লাই বন্ধ করা।

৭. সরকারি হাসপাতালের জরুরী বিভাগে শুধু জরুরী চিকিৎসা দেওয়া এবং জরুরী চিকিৎসার জন্য যাতে একটা সুতাও রোগীকে কিনতে না হয়, সেই ব্যবস্থা করা।

৮. সরকারি হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের সকল ওষুধ ও লজিস্টিক বিনামূল্যে অথবা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে সাপ্লাই দেওয়া।

৯. জেলা/ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী সার্জারী / মেডিকেল প্রসিডিওর/ চিকিৎসা ২৪/৭ এর জন্য ব্যবস্থা করা। এর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে যন্ত্রপাতি, জনবল নিয়োগ/ পদায়ন করা।

১০. বেসরকারি হাসপাতাল যাতে নুন্যতম ৫০ বেডের হয়, ব্যাঙয়ের ছাতার মত ১০ বেডের মানহীন বেসরকারি হাসপাতালকে সময় বেঁধে দিয়ে ৫০ বেডের করা। এবং একটা ৫০ বেডের হাসপাতালে কতজন ডাক্তার-নার্স-মেডিক্যাল এসিট্যান্ট-ওয়ার্ড বয়-ক্লিনার লাগবে সেটা ঠিক করে দেওয়া। কত স্কয়ার ফিট যায়গা লাগবে, কেমন ল্যাব ফ্যাসিলিটি লাগবে তা ঠিক করে দেওয়া। বেসরকারি হাসপাতালের বেতন কাঠামো ব্যাংকিং সিস্টেম এর আদলে নির্ধারণ করা।

১১. নতুন নিয়োগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। সময়মত ফাউন্ডেশন ট্রেনিং করা, চাকরি স্থানীয়করণ করা এবং যোগ্যতা সাপেক্ষে সময়মতো পদোন্নতি প্রদান করা।

১২. নির্দিষ্ট সময় পরপর কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্তঃবিভাগীয় বা অন্তঃজেলা বদলি করানো। যেমন দ্বিতীয় / তৃতীয় / চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের একই জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩-৫ বছর পরপর বদলি করানোর ব্যবস্থা করা। প্রথম শ্রেনীর কর্মচারীদেরকে একই জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে অথবা একই বিভাগের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ/জেলা হাসপাতালে বদলি করা।

১৩. আউটসোর্সিং প্রথা অবসান করা। হয় স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া, না হয় হাসপাতাল প্রশাসকদের একটা হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়, ক্লিনার, মেথর, পিয়নের আদর্শ চাহিদা সাপেক্ষে বরাদ্দ প্রদান করা।

১৪. সরকারি পর্যায়ে কোন সাবজেক্টের কতজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দরকার তার চাহিদা বের করা এবং সেই অনুযায়ী ডেপুটেশন দেওয়া। গনহারে বিশেষজ্ঞ বানিয়ে সময় ও সম্পদের অপচয় বন্ধ করা। বিশেষজ্ঞরা যাতে বিশেষজ্ঞ সার্ভিস দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। ডিগ্রি ছাড়া পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।

১৫. বিএমডিসিকে শক্তিশালীকরণ। জেলায় জেলায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের শাখা স্থাপন করা এবং জনবল নিয়োগ করা। চিকিৎসা সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ মানুষ যেন অফলাইন এবং অনলাইনে দিতে পারে। অভিযোগ দেওয়ার যৌক্তিক সময়ের (ঘন্টা) যেন বিএমডিসি প্রতিনিধি অভিযোগকারীর প্রতি রেসপন্স করে। অভিযোগ ওঠার সাথে সাথে যেন ডাক্তার বা অন্য হাসপাতাল স্টাফকে গ্রেফতার করা না হয়। অন্যান্য দেশের (ইন্ডিয়া) আলোকে চিকিৎসা সুরক্ষা আইন তৈরি করা।

লেখকঃ

ডা. মো. কবির হোসেন
এমবিবিএস ( চমেক), এমডি (এন্ডোক্রাইনোলজি), বিসিএস (স্বাস্থ্য)।