ওয়েবিনারে বিশিষ্টজন

স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে পিসিওএস অন্তর্ভুক্তের দাবি

ওয়েবিনারে বিশিষ্টজন

স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে পিসিওএস অন্তর্ভুক্তের দাবি

চিকিৎসক
পিসিওএসের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক, ওজন বেড়ে যাওয়া, ব্রণ, মুখে অবাঞ্ছিত লোম, চুল পড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায় - ছবি: ভিডিও থেকে

বংশগত ও হরমোনাল রোগ পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস)। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন বেড়ে গেলে রোগটি হয়। স্কুল-কলেজে এ সম্পর্কে আলোচনা নেই বলে সঠিক সময়ে রোগটি স্ক্রিনিং সম্ভব হচ্ছে না, যা পরবর্তীতে জটিল আকার নিচ্ছে। এ জন্য স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে পিসিওএস অন্তর্ভুক্ত এবং জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) পিসিওএস সচেতনতা মাস সেপ্টেম্বর উপলক্ষে প্রথম আলো ও রেনেটার উদ্যোগে এক ওয়েবিনারে দেশের চিকিৎসা খাতের বিশিষ্টজন এসব মতামত তুলে ধরেন। ওয়েবিনারটি আয়োজন করে পিসিওবি, বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পিসিওবি, বাংলাদেশের সভাপতি মেজর (অব.) অধ্যাপক লায়লা আরজুমান্দ বানু বলেন, বিশ্বে ১১৬ মিলিয়ন নারী ও কিশোরী পিসিওএস রোগে আক্রান্ত। অর্থাৎ প্রতি ১০ নারীর একজন রোগে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে কিশোরীর সংখ্যাই বেশি। পিসিওএসের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক, ওজন বেড়ে যাওয়া, ব্রণ, মুখে অবাঞ্ছিত লোম, চুল পড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। এ ছাড়া বংশগত বা পারিবারিক সম্পর্কের কারণেও অনেক সময় পিসিওএস হয়। সাধারণত মা-খালার থাকলে সন্তানের রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

তিনি বলেন, সামাজিক সচেতনতা পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পিসিওএস হলে অস্ত্রোপচার লাগে, এই ধারণা একেবারেই ভুল। আধুনিক চিকিৎসায় ওষুধের মাধ্যমে পিসিওএস নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় অধ্যাপক ও পিসিওবির জাতীয় উপদেষ্টা শাহ্‌লা খাতুন বলেন, পিসিওএস জীবনের জন্য বিপজ্জনক এবং জীবনযাত্রাকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যায়। ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, অ্যান্ড্রোমেট্রিয়াল ক্যান্সার, বিষণ্নতা থেকে মুক্তির জন্য অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে। দেশে কিশোর-কিশোরীদের বড় অংশ এসব রোগে আক্রান্ত হলেও সঠিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় ৭০ শতাংশ কেসে ডায়াগনিস্টক করা সম্ভব হয় না। পিসিওএস থেকে ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার, অ্যান্ড্রোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের মতো রোগ দেখা দেয়।

তিনি বলেন, সিগারেট, মাদক, অলস জীবন যাপনের মতো কিছু অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। হাঁটাচলা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। স্কুল-কলেজের সিলেবাসে রোগটি সম্পর্কে আলোচনা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

ওজিএসবির মহাসচিব অধ্যাপক গুলশান আরা বলেন, জেনেটিক হওয়ায় ৪০ শতাংশ পিসিওএস বোন থেকে। আর ১০ শতাংশ হয় মায়ের থেকে। ৮ বছরের বেশি বয়সীদের ডায়াগনিস্টক করলে পিসিওএস বোঝা যায়। শিশুদের বেশি ওজন দীর্ঘদিন চলতে থাকলে পিসিওএস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ জন্য শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। মায়ের দুধ খাওয়ালে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

পিসিওবি, বাংলাদেশের সহসভাপতি অধ্যাপক রাশিদা বেগম বলেন, পিসিওএস মানেই কিন্তু ক্যান্সার নয়। তবে মেয়েদের স্বাভাবিক মাসিক না হলে ইনফার্টিলিটি দেখা দেয়। তাদের ডিম্বানুর নিঃসরণ হয় না। তবে পিসিওএস রোগীদের চিকিৎসার পর গর্ভধারণের হার সবচেয়ে বেশি। চিকিৎসাও সহজ। বয়ঃসন্ধিকালে পিসিওএস প্রতিরোধে জীবনযাত্রা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

পিসিওবি, বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক জিন্নাত আরা নাসরিন বলেন, যাদের অল্প বয়সে পিসিওএস হয়েছে, তাদের বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

পিসিওবি, বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী বলেন, জীবনযাত্রার সঙ্গে পিসিওএসের সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। রোগটি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। পিসিএএস থেকে মুক্ত থাকতে হলে স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলতে হবে। অলস জীবন পরিহার করতে হবে। টক দই খেলে উপকার মেলে। ইয়োগা করা যেতে পারে।