দেশে প্রতি ১০ নারীর একজন আক্রান্ত

নারীর নীরব কষ্টের নাম এন্ডোমেট্রিওসিস

দেশে প্রতি ১০ নারীর একজন আক্রান্ত

নারীর নীরব কষ্টের নাম এন্ডোমেট্রিওসিস

শিশু
জন্ম থেকেই এন্ডোমেট্রিওসিস নিয়ে একটি মেয়ে জন্মাতে পারে। তবে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে তাকে বন্ধ্যাত্বের দিকে নিয়ে যায় - ছবি: ডক্টর টিভি

এন্ডোমেট্রিওসিস নারীদের এমন এক বেদনাদায়ক সমস্যা, যাকে সমুদ্রে ডুবে থাকা বরফখণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এর যতখানি প্রকাশিত, তার বেশিটাই থাকে লুক্কায়িত। বাংলাদেশে প্রতি ১০ নারীর একজন জীবনে কোনো না কোনো সময় এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। আর বন্ধ্যাত্বের শিকার প্রতি চার নারীর একজনই রোগটিতে আক্রান্ত।

‘বিশ্ব এন্ডোমেট্রিওসিস সচেতনতা সপ্তাহ’ উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) সকালে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজে এক সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘থামাও এন্ডোমেট্রিওসিস’।

সেমিনারে  এন্ডোমেট্রিওসিস অ্যাডিনোমায়োসিস সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের গাইনি ও অবস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেহরীন ফরহাদ সিদ্দিকা বলেন, ‘জন্ম থেকেই এন্ডোমেট্রিওসিস নিয়ে একটি মেয়ে জন্মাতে পারে। এটি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে তাকে বন্ধ্যাত্বের দিকে নিয়ে যায়।’

সেমিনারে জানানো হয়, জরায়ুর সবচেয়ে ভেতরের স্তরের নাম এন্ডোমেট্রিয়াম। এ এন্ডোমেট্রিয়াম কোষ বা কলা যদি জরায়ুর বাইরে বাসা বাঁধে বা বর্ধিত হয়, তাকে বলে এন্ডোমেট্রিওসিস। ডিম্বাশয়, পেটের ভেতরের আবরণী পেরিটোনিয়াম, বিভিন্ন লিগামেন্ট, অন্ত্র, সেপটাম, স্কার টিস্যু বা কাটা সেলাইয়ের ওপর জমতে পারে এ কোষ। জরায়ুর বাইরে অবস্থান থাকলেও মাসিক চক্রের সময় এ কোষগুলোর মধ্যেও নৈমিত্তিক পরিবর্তন ঘটে। মাসিকের সময় এর মধ্যে রক্তপাত হয় বা তীব্র ব্যথা হয়। অনেক সময় ঋতুস্রাবের স্বাভাবিক রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় এবং রক্ত উল্টো পথে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ রক্তগুলো অনেক সময় জমাট বেঁধে এক ধরনের সিস্ট তৈরি হয় ও নালিগুলো বন্ধ হয়ে যায়।

এন্ডোমেট্রিওসিসের প্রধান উপসর্গ সম্পর্কে ডা. শেহরীন বলেন, ‘খুব কম বয়সে বা মাসিক শুরু হলে ব্যথার কারণে মেয়েরা উঠতে পারে না। এমন কি তারা প্রস্রাব-পায়খানা পর্যন্ত করতে পারে না। এই রোগ জটিল আকার ধারণ করার আগেই দেখা যায় ১০ বছর কেটে যায়। তখন চিকিৎসা প্রক্রিয়াও খুব জটিল হয়ে পড়ে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতলের অধ্যক্ষ শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইখলাছুর রহমান বলেন, ‘সঠিক সময়ে এন্ডোমেট্রিওসিস শনাক্তের পর চিকিৎসা করা গেলে ৫০ শতাংশ বন্ধ্যাত্ব কমানো সম্ভব। সমাজের প্রতিটি স্তরে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। মাসিক চলাকালীন প্রচণ্ড ব্যথা তিন দিনের বেশি থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘রোগটি সাধারণত কিশোরী বয়সে শুরু হয়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং এক সময় বন্ধ্যাত্বে পরিণত হয়। এজন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।’ এন্ডোমেট্রিওসিস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে আউটডোর ক্লিনিক চালু করা হয়েছে বলে জানান করেছেন বলেও জানান অধ্যাপক ডা. ইখলাছুর রহমান।

সেমিনার শেষে সারা দেশে এন্ডোমেট্রিওসিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে একটি ফোরাম গঠন করা হয়। ফোরামে শিক্ষক, শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা থাকবেন।



ইভেন্ট স্ট্রিম : নারী স্বাস্থ্য নিয়ে লেখাসমূহ