গর্ভকালীন ডায়াবেটিস গর্ভ-পরবর্তী সময়ে থাকার সম্ভাবনা কতটুকু

অধ্যাপক ডা. আব্দুল মান্নান সরকার

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড) হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগের সাবেক প্রধান

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস গর্ভ-পরবর্তী সময়ে থাকার সম্ভাবনা কতটুকু

ডায়াবেটিস
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস - ফাইল ছবি

গর্ভবতী হওয়ার আগে ডায়াবেটিস স্বাভাবিক ছিল, রক্তে সুগার নরমাল ছিল। কিন্তু গর্ভবতী হওয়ার পর ডায়াবেটিস দেখা দিয়েছে। এজন্যই এটাকে বলা হয় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে কারা ঝুঁকিতে আছে? গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে শরীরের মধ্যে একটি হরমোনাল পরিবর্তন হয়। বিভিন্ন ধরনের কতগুলো হরমোন বেড়ে যায়। বিভিন্ন কারণে তখন রক্তে সুগারও বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে।

স্বাভাবিক অবস্থায় ডায়াবেটিস যেভাবে ডায়াগনোসিস করি খালি পেটে কত বা খাবারের দু’ঘন্টা পরে কত- এই একটি হিসাব আছে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হিসাব অন্যরকম। আমরা প্রচলিতভাবে যে ডায়াগনোসিস করি, সেভাবে নয়।

এখানে ডায়াগনোসিস ক্রায়টিরিয়াগুলো একটু ভিন্ন। এটাকে খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। কারণ গর্ভকালীন ডায়াবেটিস যদি সঠিক সময়ে ডায়াগনোসিস না হয় এবং ঠিকভাবে চিকিৎসা না হয়, তাহলে বাচ্চার একটা ঝুঁকি থাকে। মায়েরও ঝুঁকি থাকে।

বাচ্চা অ্যাবরশন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে অথবা বাচ্চা অনেক বড় হয়ে যায়, মোটা হয়ে ওজন বেড়ে যায়। অনেক সময় বাচ্চা গর্ভকালীন অবস্থায় মারা যেতে পারে।

মায়েরও অনেক জটিলতা দেখা দেয়। একলামশিয়া, প্রি-একলামশিয়া অসুখগুলো বেড়ে যায়। অনেক সময় এমনিয়টিক ফ্লুয়িড বেড়ে আবার কমে যেতে পারে। এই ধরনের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কাজেই মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা প্রয়োজন। সে জন্য গর্ভধারণের সাথে সাথে জেনে নিতে হবে ডায়াবেটিস আছে কি-না। যাদের তেমন কোনো সমস্যা নেই, তারা ২৮ সপ্তাহের দিকে গিয়ে একটা পরীক্ষা করবে। তার ডায়াবেটিস আছে কি-না দেখবে। নিয়মিত একটা চেকআপ করবে।

আমরা যদি বুঝতে পারি গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়েছে, তাহলে ডায়াবেটিসের মাত্রা কেমন সেটা দেখে, তার শরীরের ওজন ও উচ্চতার সাথে ঠিক করে খাবার তালিকা করে দেবো। কারণ গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে খাবার কম খেলে হবে না। গর্ভবতী নারীদের খাবারের পরিমাণ বেড়ে যায়। তার সাথে তার খাবার নিয়ন্ত্রণ করা হবে তাকে ইনসুলিন বা ওষুধ দিতে হবে। যদি ওষুধের প্রয়োজন হয়, তাহলে দিতে হবে ইনসুলিন। ইনসুলিন দিয়ে পুরো প্রেগন্যান্সির সময়টাতে চিকিৎসা করতে হবে।

সুগারের মাত্রা এমনভাবে রাখতে হবে যেন খালি পেটে ৫ এর ওপরে না যায়। খাবারের দু’ঘন্টা পরে যেন এই ৪ থেকে ৭, অতিরিক্ত ৭ এর ওপরে যেন না যায়। এইটা যদি খাবারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হয়, তাহলে ওষুধ লাগে না। আর যদি নিয়ন্ত্রণ না হয়, তাহলে কোনো ঝুঁকি নেওয়া যাবে না; সাথে সাথে ইনসুলিন নেওয়া শুরু করতে হবে। তবে এই ইনসুলিন তাকে সারাজীবন চালাতে হবে তা না।

সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়ে যাওয়ার পরে ৯০ ভাগের ওপরে নারীদের ডায়াবেটিস থাকে না, তখন নরমাল হয়ে যায়। এসময় আর ইনসুলিন লাগে না। আর ১০ ভাগের মত রোগীদের ডায়াবেটিস আবার থেকে যায়।



ইভেন্ট স্ট্রিম : নারী স্বাস্থ্য নিয়ে লেখাসমূহ