ডায়াবেটিস রোগীরা কী খাবেন, কতটুকু খাবেন

অধ্যাপক ডা. লায়েক আহমেদ খান

সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ। অধ্যাপক, হরমোন বিভাগ ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

ডায়াবেটিস রোগীরা কী খাবেন, কতটুকু খাবেন

ডক্টর
অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা, ডায়াবেটিস হলে ডিম খাওয়া যাবে না। সপ্তাহে ৫-৬টি ডিমও খেতে পারবেন - ফাইল ছবি

ডায়াবেটিস মূলত দুই ধরনের। একটি হলো টাইপ-১; অন্যটি টাইপ-২ ডায়াবেটিস। এর বাইরেও দুই ধরনের ডায়াবেটিস রয়েছে। তবে এগুলো খুব একটা দেখা যায় না। এর একটি হলো, জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস; অন্যটি আদার স্পেসিফিক বা অন্যান্য কোনো রোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত ডায়াবেটিস।

আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে প্রায় ৯৪ শতাংশ টাইপ-২-তে আক্রান্ত। এজন্য আমরা তাদের খাদ্য তালিকা ও চিকিৎসাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের চিকিৎসা দুই রকম। একটি হলো, ওষুধের মাধ্যমে; অন্যটি হলো তার লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থ থাকা বা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা।

লাইফস্টাইলে পরিবর্তনের মাধ্যমে চিকিৎসা
লাইফস্টাইলের মধ্যে দুটি বিষয় থাকে। এক, শরীর চর্চা ও দুই, ডায়েট। ডায়েট ও শরীর চর্চাকে আমরা ইংরেজিতে মেডিকেল নিউট্রিশনাল থেরাপি বলে থাকি।

১. প্রত্যেক ডায়াবেটিক রোগীর সুষম খাদ্য খাওয়া উচিত। যেসব খাদ্যে শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাট ও ভেজিটেবলস থাকে, সেগুলো খাওয়া উচিত। এখন জানা যাক, কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা কতটুকু খাবেন? আমাদের দেশের হিসেবে ৫০-৬০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ ভাত বা রুটি যেটা সবাই খাই, সেটি খাওয়া যাবে। এখন প্রশ্ন হলো কী ধরনের ভাত খাবেন? মোটা লাল চালের ভাত খাওয়ার জন্য আমরা বলে থাকি। রুটি খেলে অবশ্যই আটার, ময়দা নয়। লাল আটা হলে বেশি ভালো হবে।

২. শাক-সবজি যত ইচ্ছে খেতে পারবেন। তবে যেকোনো একটি সবজি খুব বেশি না খেয়ে মিক্সড ভেজিটেবলস খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

৩. মাছ-মাংস আমরা অবশ্যই খাব। দুধ কেউ খেতে চাইলে খেতে পারবেন। কিন্তু দুধের স্বর খাওয়া যাবে না। মাছ বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। চর্বিযুক্ত যেসব খাবার আছে যেমন, রেড মিট এগুলো আমরা বলি না খেলেই ভালো। খেতে চাইলে চর্বিটা বাদ দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। দেশি মুরগী যত খুশি খান, কোনো সমস্যা নেই।

৪. অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা, ডায়াবেটিস হলে ডিম খাওয়া যাবে না। আপনি একটি-দুটি ডিম খেতে পারেন। এমনকি সপ্তাহে ৫-৬টি ডিমও খেতে পারবেন, কোনো সমস্যা হবে না। শরীরের প্রোটিন পূরণে ডিম খেতে হবে।

৬. প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করতে হবে। হালকা ব্যায়ামের মধ্যে জগিং, ট্রেডমিল বা ইন্সট্রুমেন্টাল কিছু হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা। এ ব্যায়াম দিনের যেকোনো সময় করা যাবে। তবে সময় নির্ধারণ করে নিলে ভালো হবে। আপনি যদি সকালে হাঁটেন, তাহলে প্রতিদিন সকালেই হাঁটবেন।

৭. হাঁটার ক্ষেত্রে মনে রাখবেন, ভোরে উঠে কখনো খালি পেটে হাঁটবেন না। অবশ্যই কিছু খেয়ে নিবেন। কারণ খালি পেটে হাঁটলে হয়তো সুগার লেভেল অনেক কমে যেতে পারে এবং আপনি হাইপোগ্লাইসেমিয়াতে ভুগতে পারেন।

ওষুধে ডায়াবেটিস চিকিৎসা
১. প্রাথমিক পর্যায়ে মুখে খাওয়ার ওষুধ দেয়া হয় এবং বিভিন্ন কোম্পানির এ ধরনের ওষুধ রয়েছে। এরপরে আসে ইনসুলিন। অনেকেই ইনসুলিন ভয় পান এবং মনে করেন, এটিই শেষ ধাপের চিকিৎসা। দেহ ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্ট বা ইনসুলিনের কার্যকারিতা শেষ হয়ে গেলে নির্ঘাত মৃত্যু ছাড়া কোনো উপায় নেই। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল এবং এ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।

২. আক্রান্তদের ইনসুলিন যেকোনো সময় দেয়া যায়। সেটি শুরু কিংবা শেষেও হতে পারে এবং সবচেয়ে বড় কথা ইনসুলিন কখনো ফেইল করে না। বিশেষ করে টাইপ-১- এর ক্ষেত্রে ইনসুলিনের বিকল্প নেই। হয়তো ইনসুলিনের পরিমাণ কমবেশি লাগতে পারে।

৩. আমাদের জানা দরকার, ডায়াবেটিস কেন হচ্ছে? শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি বা ইনসুলিনের কার্যকারিতা ব্যাহতের জন্যই ডায়াবেটিস হচ্ছে। স্থূলকায় বা মোটা হয়ে গেলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা অনেকটা কমে যায়। এই যে শরীরের ইনসুলিন কমে যাচ্ছে, সেটিই সরবরাহ করা হচ্ছে।

৪. মুখে খাওয়ার কিছু ওষুধ রয়েছে, সেগুলো বিভিন্নভাবে কাজ করে। কিছু ওষুধ শরীরের বিদ্যমান ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। আবার কিছু ওষুধ শরীরের যে অংশ থেকে ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে যেমন, অগ্ন্যাশয়ের বিটা সেল, সেখানে চাপ সৃষ্টি করে ইনসুলিন বের করে আনার চেষ্টা করে। কিছু ওষুধ আছে যেগুলো শরীরে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে তা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। এভাবে বিভিন্ন ওষুধ নানাভাবে কাজ করে এবং আমরা যে রোগীর যেটি প্রয়োজন, সেভাবে চিকিৎসা দেই।


আরও দেখুন:

ইভেন্ট স্ট্রিম : খাবারের গুণাগুণ