ডায়াবেটিস চিকিৎসায় এম্পাগ্লিফ্লোজিন ও মেটফরমিন

অধ্যাপক ডা. লায়েক আহমেদ খান

সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ। অধ্যাপক, হরমোন বিভাগ ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

ডায়াবেটিস চিকিৎসায় এম্পাগ্লিফ্লোজিন ও মেটফরমিন

ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস চিকিৎসায় এমপাগ্লিফ্লোজিন ও মেটফরমিন - ফাইল ছবি

দীর্ঘদিন যারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের জন্য এম্পাগ্লিফ্লোজিন খুব ভালো এবং নতুন একটি ওষুধ। মেটফরমিনও ভালো এবং অত্যন্ত সস্তা দামের ওষুধ।

আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনসহ আন্তর্জাতিক সবগুলো গাইডলাইনে মেটফরমিনকে এক নম্বর ওষুধ ধরা হয়। রোগীর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকলে বা কোনো কন্ট্রা-ইন্ডিকেশন না থাকলে এ ওষুধই সেরা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রোগীকে আমরা কোন ওষুধটা দিব। ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ বা এথোরেস্পিরেটিভ কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ যেটাকে বলি, একই স্থান থেকে উৎপত্তি। ফলে একই রকম রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে। জেনেটিক্স প্রায় একই ধরনের এবং স্থূলকায় রোগীদের ডায়াবেটিস থাকলে হৃদরোগ থাকার সম্ভাবনা দুই-তৃতীয়াংশের মতো। মানে ১০০ ডায়াবেটিক রোগীর মধ্যে প্রায় ৬০ জনেরই এথোরেস্পিরেটিভ কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ থাকে।

এথোরেস্পিরেটিভ কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজের প্রবণতা থাকায় এম্পাগ্লিফ্লোজিন খুব ভালো একটা ওষুধ। এখন চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন বলেন আর এফডিএ বলেন, তারা ২০০৮ সাল থেকে একটা রুল জারি করেছে যে, ডায়াবেটিসের জন্য কোনো ওষুধ বানালে সেটি অবশ্যই কার্ডিওবান্ধব হতে হবে। এম্পাগ্লিফ্লোজিন এদিক থেকে অনেক ভালো ওষুধ।

এ ওষুধ হার্ট ফেইলিয়র হয়ে হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি প্রায় ৩৩ শতাংশ কমিয়ে আনে এবং হার্টের সমস্যার কারণে মৃত্যুঝুঁকি ১৪ শতাংশ কমায়। তাই আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনসহ অন্যরা বিশেষ করে ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব কার্ডিওলজি মনে করে, এম্পাগ্লিফ্লোজিন বা এসজিএলটি-২ এক্ষেত্রে একটি অন্যতম ওষুধ। এসজিএলটি-২ একটি গ্রুপকে বুঝানো হয় যার মধ্যে একটি ওষুধ হলো এম্পাগ্লিফ্লোজিন।

প্রথমত আমরা মেটফরমিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করি, দ্বিতীয় ধাপে এম্পাগ্লিফ্লোজিন ব্যবহার করি। তবে যাদের এইচবিএ-১সি’র পরিমাণ ৯ বা ১০- এর কাছাকাছি, তাদের এ দুটি ওষুধের কম্বিনেশন চিকিৎসা করলে তুলনামূলক ভালো ফল আসে। এম্পাগ্লিফ্লোজিন এবং মেটফরমিন— দুটি ওষুধই হার্টকে সুরক্ষা দেয়, সাথে এম্পাগ্লিফ্লোজিন কিডনিকেও সুরক্ষা এবং প্রেসার কমায়।

তবে অবশ্যই কম্বিনেশনের সময় কন্ট্রা-ইন্ডিকেশনগুলো খেয়াল রাখতে হবে। যেমন, ইউরিনারি ইনফেকশন বা প্রস্রাবে ইনফেকশন থাকলে এম্পাগ্লিফ্লোজিন না দেওয়া ভালো। আবার রোগী বয়স্ক হলে, প্রেসার অনেক কম থাকলে তাকে এম্পাগ্লিফ্লোজিন না দেওয়া ভালো।

ডায়াবেটিসে রোগীর মৃত্যুর মূল কারণ হলো হার্টের সমস্যা। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রোগী হার্টের সমস্যার কারণে মারা যান। এম্পাগ্লিফ্লোজিন ওষুধটা হার্টের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দিচ্ছে, হার্ট ফেইলিয়রের কারণে হাসপাতালে ভর্তির হারও কমিয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া কিডনির মাইল্ড রেনাল সমস্যা থাকলে সেটি কমিয়ে দেয় এম্পাগ্লিফ্লোজিন।

এম্পাগ্লিফ্লোজিন এবং মেটফরমিনের কম্বিনেশন প্রয়োজন হয় এবং কোনো কন্ট্রা-ইন্ডিকেশন না থাকে, তাহলে এ দুটিই খুব ভালো ওষুধ এবং আমরা রোগীকে দুটিই একসাথে দিতে পারি।